আজ ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শুনেছি ক্রন্দন দহন

– মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

লাজুকলতায় মোড়ানো ছিল এক টুকরো হৃদয়
ছলছল আঁখিতে পলকহীন ঝলক দেখেছি
দেখতেদেখতে চব্বিশটি বসন্ত পরে ধ্বনি শুনেছি।

এখনো সেই আগের মতোই আবেগ ও বিবেক
হৃদয় গহীনে বুক ভরা আশা- ছিল ভালোবাসা,
কেন এমন হয় আমি তো আমার মাঝে নেই –
প্রিয়ার প্রীতিলতায় হারিয়ে গেছি বহু আগেই।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

ক্রন্দন দহন দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমি ক্লান্ত
এ দেহ এ আশা ভালোবাসা অফুরান তুরুপ
একদিন আমিও হয়তোবা হয়ে যাবো নিশ্চুপ।

কেউ শিল পাথরের বুকে ঢুকে দেখেছে কি?
হে ঠিক তাই আমার জীবনের প্রথম কোনো পত্র,
বাহিরে গরম ভিতরে নরম কলিরও কথা শুনি
প্রথম প্রেমপত্রে ছিল লুকিয়ে শত কাব্যের খনি।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

মায়াবী মায়াজালে ছায়াজাল আঁকা কিঞ্চিৎ বাঁকা
তুমি ছাড়া আমি আর কেউ নেই নীড় ছিল ফাঁকা।

সেই চাহনি সেই কামনার দুটি ঠোঁটের মৃদু ইশারায়
ব্যাকুল হয়ে হারিয়েগেছে ধরার বুকে না বলা কথায়

তুমি কেঁদে ছিলে অঝোরে বহিছে তুফান সজোড়ে
নিরুত্তেজ নিরুত্তর কি দেবে উত্তর আমি জানি নে
কামিনী তুমি যামিনী প্রেমের তাজমহলের জমিনে।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

উত্তাপ ছড়ালে কেন কবি আবার তুমিই নিরুত্তাপ
জয় করে ক্ষয় তুমি কি পেলে বীরউত্তম খেতাব।

আজ আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি বারেবার
রোদন করে ছেদন পাষাণভেদী সুর তোলে সেতার

এতো ঝর্ণাধারা এতো অবারিত সোনার অশ্রুপাত
বুঝিনি আগে বুঝিনি কখনো করবে সে কি স্নান
দুইযুগের কতো কথায় ছিলো না বলা অভিমান।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

ফুল ফোটে মালি হাসে- দেখে ভ্রমরের গুঞ্জন
আমি ভীরুর গভীরে কেন দিলে না বিষাক্ত খঞ্জন।

রুপালি তারা হাতছানি দেয় প্রতিক্ষণে এই মনে
মালতির দেখা পেতে হেঁটে হেটে চলে যাই বনে।

মিটলো না স্বাদ নাহি পরশ দেখিনি রাঙা দুটি হাত
কেমন ছিল বদন কে করেছে বারণ কি ছিল কারণ
সাগরে গর্জন ঢেউ খেলে যায়- তাঁরে করিয়া স্মরণ।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

যে পথ চলে গেছে দূর থেকে বহু দূরে ঐ সমুদ্রুর
ঝড় বৃষ্টি তুফান গেল- চেয়ে দেখি ঝাঁঝাল রোদ্দুর।

চুপিচুপি মন দেয়া মন নেয়ায় বীর হয় কুপকাত
যতই আসে বিপদ মহাবিপদ সয়ে যায় আঘাত।

প্রেমের আঘাত প্রেমের বেদন সহিতে পারে কে-বা
স্বর্গ হতে আসে প্রেম চিড়ে ছিড়ে করে ছারখার
সফল হলে আলো জ্বলে- বিফল হলে আঁধার।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

কন্যাকুমারী নারী তুমি ভিন্ন কিছু ছিন্ন কচিপাতা
পরকে আপন করলে কেন বুকে রেখে মাথা?

এত বসন্ত পেরিয়ে গেল আজি চৈত্র ছড়ায় খরা
ফাগুনের আগুনে হারিয়ে গেলে স্বপ্ন দিবে ধরা!

বলেছিলে তুমি এসে ছিলে স্বাক্ষী তব জানালা
চোখাচোখি দেখাদেখি উত্তর দক্ষিণারঞ্জন পানে
শত জনমের স্মৃতিচারণ করি কবিতা গল্প গানে।

আজো সেই সকরুণ কান্নার শব্দ শুনিতে পাই
ভুলে থাকা কঠিন তাহা বুঝানো বড়ই যে দায়
যেখানেই থাকো সুখে থেকো বলিও না বিদায়।

বিদ্রঃ অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “প্রেম ও বেদনা” পান্ডুলিপির অংশ বিশেষ।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap