আজ ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কালিয়াকৈরে আনসার একাডেমিতে ৪০তম জাতীয় সমাবেশে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা।

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা যখন দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন ছিলেন যে, ৮২ ভাগের উপর মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করত। জাতির পিতা যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশ গড়ার কাজ হাতে নিয়েছিলেন। সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর। আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হল। তারপর থেকে আমাদের কাঙ্খিত লক্ষে আমরা পৌছাতে পারিনি।

২১ বছর আওয়ামীলীগ সরকার আসার পর জনগণের অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হিসেবে ব্যাপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আজকে দারিদ্র সীমা আমরা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা স্বল্পোউন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি হয়েছি। সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

সেই সাথে সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলেছি। স্যাটেলাইট-১, বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি। তাছাড়া বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। আমাদের দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই ক্ষেত্রে আমরা সকলকে এক হয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে মনে করি সেদিন বেশি দুরে নয় যে, বাংলাদেশ ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত উন্নত সম্মৃত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ইতিমধ্যে মজিববর্ষ উৎযাপন করছি।

জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ েেথেকে উদযাপন করা হবে। ইতিমধ্যে কাউন্টডাউন্ট শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিটি ঘর আলোকিত করবো। সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটা মানুষ পাবে। প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ নগর।

তিনি বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ তিন বাহিনী প্রধানগণ ও আনসার বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, এ বাহিনীর সদস্যরা ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে (বর্তমানে মজিবনগর) সেখানে বাংলাদেশের সরকার গঠিত হয়েছিল। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এপ্রিল ১০ তারিখে। ১৭ই এপ্রিল সেই মেহেরপুরের আম্রকাননে শপথ গ্রহন হয়।

ওই শপথ গ্রহনে যারা গার্ড অব অর্নার দেয় সেখানে আনসার বাহিনীও মজুদ ছিল এবং তারাই সেই গার্ড অব অর্নার প্রদান করেছিল। তাছাড়া এ বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ২২৯ বীর সদস্য অংশ গ্রহন করেছিল।

কাজেই আমি বাংলাদেশের প্রথম সরকার, স্বাধীন সরকার, যে সরকার গঠিত করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধান মন্ত্রী হিসেবে। জাতির পিতাকে যেহেতু ২৬ মার্চেও ১ম পহরে স্বাধীনতা ঘোষনা দেওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জাতির পিতার নির্দেশ মোতাবেক সরকার গঠিত হয় এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। সেই সরকারকে গার্ড অব অর্নারে আমাদের আনসার বাহিনীর ভূমিকা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তোলা জন্য পদক্ষেপ নেন। সেই সঙ্গে আনসার বাহিনীকেও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপালনসহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ এগুলো নির্মূলে আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, যখন অগ্নি সন্ত্রাস আমাদের দেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে চলেছিল। তখন আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে রেল লাইন সংরক্ষনে বিরাট অবদান রাখে। দেশের যে সময় জননিরাপত্তা রক্ষা প্রয়োজন হয় আনসার বাহিনীকেই তখন দায়িত্ব দেয়া হয়। আমাদের অকুতোভয় আনসার বাহিনী জনগণের জান-মাল রক্ষায় নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎর্সগ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত। এ বাহিনীতে প্রায় ৬১ লাখ সদস্য রয়েছে। ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ ভূমিকা রেখে যান। আমাদের অর্থনীতিক চাকাকে সচল রাখেন। বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। দেশ ও জনগণকে নিরাপত্তা রাখতে ২টি মহিলা ব্যাটালিয়ানসহ এ বাহিনীদের ৪২ টি আনসার ব্যাটালিয়ান সৃষ্টি করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি আমাদের কুটনৈতিক এলাকা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী তারাও তাদের প্রয়োজনে এই বাহিনীকে ব্যবহার করে থাকেন।

তিনি আনসার সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের যে কোন সমস্যা সমাধানে আমাদের আওয়ামীলীগ সরকার সবসময় আন্তরিক এবং সহানুভতিশীল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর এ বাহিনীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে বাহিনীর উন্নয়নের ব্যাপক কাজ করেছিল। আনসার বাহিনীর জাতীয় পতাকা ছিল না। ১৯৯৮ সালে আমরা এ বাহিনীকে সবোর্চ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা আমরা প্রদান করি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদকও প্রদান করা হয়, একটি গার্ড ব্যাটালিয়ানসহ ৪টি আনসার ব্যাটালিয়ান গঠন করাও হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার মধ্যে পরমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মুজিব নগর মুক্তিযুদ্ধো সিটি কমপ্লেক্স, আম্রকাননের নিরাপত্তার জন্য ২টি আনসার ব্যাটালিয়ান কার্যক্রম প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে। ব্যাটালিয়ানের সাংগঠনিক কাঠামো পুর্নগঠন করে জনবল আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া আনসার ব্যাটালিয়ান আইন প্রনয়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। উপ-মহাপরিচালক থেকে পরিচলাক পর্যন্ত পদোন্নতি সমন্বয় করা হয়েছে।

২০১৯ সালে ৬টি উপ-পরিচালক এবং ১৭টি পরিচালকের পদ সৃজন করা হয়েছে। বিগত বছরে বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবি ৯৬৬ জন পদোন্নতি পেয়েছ। আনসার ও বিডিপি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। এ ব্যাংকের মালিক আনসার ভিডিপি সদস্যরা, আপনারাই ঋণ নিতে পারেন, আপনার যে কোন কাজ করতে পারেন। অথাৎ আপনার নিজেরা যেন নিজের পায়ে দাড়াতে পারেন সেই ব্যবস্থাই আমরা করে দিয়েছি। তাছাড়া আপনাদের জন্য ঝুঁিক ভাতাও প্রবর্তন করেছি। আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর সেবা ও সাহসিকতা পদক আওয়ামীলীগ সরকারই প্রবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আপনারা এ বাহিনীর সদস্যগণ খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রনি ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে আন্তজার্তিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমস-এ বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২ পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছে এ বাহিনীর সদস্যরা। নিজেদের উপর দায়িত্ব সততা, সাহস আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহব্বান জানান।

এরআগে সকাল ১১টার দিকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সালাম গ্রহণ ও খোলা জীপে করে কুচাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এসময় বিভিন্ন কৃত্বিতের জন্য ১৪৩ জনকে বিভিন্ন পদক প্রদান করে। পরে আনসার একাডেমির লেকের মঞ্চে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে উনিশের হাত ধরে বিশে বিশ্বজয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করা হয়েছে। সে স্বাধীন দেশে আমরা মাথা উচু করে চলবো। আগামী প্রজন্মেও জন্য আমরা গড়ে যেতে চাই এই দেশেকে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুদা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ। আমরা ক্ষুদা মুক্ত করতে পেরেছি। এখন আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি পুষ্টির দিকে। মানুষের সার্বিক জীবন উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি। মানুষ যেন তার জীবনের সব চাহিদা মিটিয়ে সুন্দরভাওে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেরই এগিয়ে যাচ্ছি।

এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে ইতিহাস আছে, সেটা তোলে ধরা হয়েছে। এই সঠিক ইতিহাস তোলে ধরায় ভবিষতে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে যারা এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভবিষতের বার্তা নিয়ে আসা হয়েছে। অতীতকে জেনে তারই রেশ ধরে ভবিষতে এগিয়ে যাওয়া হবে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে চলা। যে বাঙ্গালী মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল, সে বিজয়ই জাতি হিসেবে, সম্মানিত জাতি হিসেবে আমরা মাথা উচু করে চলবো। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়বো।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap