আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক গবেষণা পরিকল্পনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি সাভার (ঢাকা)

সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক গবেষণা পরিকল্পনা কর্মশালা -২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে।কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান এম,পি। এসময় তিনি বলেন, এবার কোরবানীর জন্য পশুর লক্ষ্যমাত্রা থেকে অধিক প্রস্তুতি আছে আমাদের, চোরাচালানের মাধ্যমে যারা দেশে পশু আনছে তারা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

০৯ জুন(রোববার) দুপুরে বিএলআরআই সম্মেলন কক্ষে (৪র্থ তলা) বার্ষিক গবেষণা পরিকল্পনা কর্মশালা শুরু হয়ে বিকেলে শেষ হয়। কর্মশালায় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, জনাব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।

এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান এম,পি বলেন, রাতের অন্ধকারে অনেক কিছুই দেশে ঢুকে, সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেষ্টা তারা করছেন।রাস্ট্র কোনোভাবেই কোরবানির জন্য কাউকে গরু আমদানি বা পশু আমদানি করার বৈধতা দেয়নি।চোরাচালানের মাধ্যমে যারা দেশে পশু আনছে তারা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।দেশে কোরবানিতে পশুর চাহিদা আছে ১ কোটি ৭ লক্ষ যেখানে আমাদের প্রস্তুতি আছে ১ কোটি ৩০ লক্ষ পশু, যা চাহিদা অনুযায়ী অনেক বেশি। মন্ত্রী কর্মশালায় বক্তব্যে আরো বলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগণ দেশের সম্পদ, তাদের গবেষণার কারণে দেশের প্রান্তিক খামারি ও কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে, বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) (রুঃ দা:) ড. নাসরিন সুলতানা গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান,
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগ/দপ্তরের আঞ্চলিক কেন্দ্রের অধীনে পরিচালক, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে মোট ১৩৯ জন বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা রয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করতে ও দাপ্তরিক কাজ বাস্তবায়নে ২৫০ জন কর্মচারী রয়েছে।

বিএলআরআই এর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য,
আনিম্যাল ও পোল্ট্রি নিউট্রিশন,ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স, ভাইরোলজি ও ব্যাকটেরিওলোজি, ফুড সেফটি, ভ্যাকসিন সিড, ডেভেলপমেন্ট, জিনোম সিকোয়েন্সিং, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফিড বায়োটেকনোলজি, কৃত্রিম প্রজনন, রিপ্রোডাকশন বায়োটেকনোলজি, ডেইরি মাইক্রোবায়োলজি, ডেইরি প্রসেসিং, মিট প্রসেসিং গবেষণাগার সহ বর্তমানে মোট ১২ টি গবেষণাগার রয়েছে।

বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, জনাব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই দুর্যগ মুহূর্তে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাণী গবেষণা ইনস্টিটিউট। আমাদের ইতিমধ্যে রয়েছে ৩টি জাতীয় স্বীকৃত গবেষণাগার, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য BSLII+ জাতীয় রেফারেন্স ল্যাবরেটরি (BSLII+ National Reference Laboratory for Avian Influenza), পিপিআর-এর জন্য সার্ক রিজিওনাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি (SAARC Regional Diagnostic Laboratory for PPR), অ্যান্টি-মাইক্রোবিইয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) গবেষণার জন্য ন্যাশনাল রেফারেন্স গবেষণাগার রয়েছে।

বিএলআরআই-এর ভবিষ্যৎ গবেষণা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, জীব প্রযুক্তি, ন্যানোটেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিক্স, জিন এডিটিং, সিমেন সেক্সিং, ভ্যাকসিন ও বায়লোজিক্সের উন্নয়ন, ফিডস ও ফডারে পুষ্টিগতমান উন্নয়ন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ প্রশমন ব্যবস্থাপনা, পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও মূল্য সংযোজন, চতুর্থ শিল্প বিল্পব (4IR) প্রযুক্তি এবং খামার আধুনিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন প্রযুক্তি গ্রহণের উপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছে। এছাড়াও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা এবং বিএলআরআই এর কর্মদায়িত্ব বিবেচনা করে ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের বিএলআরআই এর উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে, এর মধ্যে
গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্যাকেজ, ইউরিয়া-মলাসেস স্ট্র (ইউএমএস), ঘাস সংরক্ষণে সাইলেজ প্রযুক্তি, উচ্চ ফলনশীল ঘাসের জাত বিএলআরআই নেপিয়ার- ১, ২, ৩ ও ৪ উদ্ভাবন, পিপিআর ভ্যাকসিন সিড, গোটপক্স ভ্যাকসিন সিড, বিএলআরআই এফএমডি ট্রাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন সিড (ও, এ, এশিয়া-১), শুভ্রা ও স্বর্ণা (লেয়ার স্ট্রেইন), ছাগল ও গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য পিলেট ও TMR তৈরি, এফএমডি এবং পিপিআর নিয়ন্ত্রণ মডেল ইত্যাদি কৃষক পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয় এবং মাংস, দুধ এবং ডিম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বিএলআরআই এ পর্যন্ত গবেষণা করে ১১টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মোট ৫৪টি প্রাণী ও পোল্ট্রি জাত/ ভ্যারাইটি এবং ৫৩ টি দেশি ও বিদেশি ফডার জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করছে।
গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও পোল্ট্রির বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য রয়েছে উন্নতমানের বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন গবেষণা খামার।

এছাড়াও সাম্প্রতিক বিএলআরআই গবেষণালব্ধ ফলাফলের মাধ্যমে রেড চিটাগাং ক্যাটেল (RCC) কে জাত হিসাবে ঘোষণা। গবাদিপ্রাণির লাম্পি স্কিন ডিজিজের (LSD) ভ্যাকসিন এবং মুরগির জন্য এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। (A/H9N2) ভ্যাকসিনের সিড উদ্ভাবন। আরসিসি, হিলি চিকেন এবং গয়ালের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং। বিএলআরআই মিট চিকেন-১ (সুবর্ণ)। লবণসহিষ্ণু ঘাসের জাত বিএলআরআই ঘাস-৫ উদ্ভাবন। আমাদের গর্বিত অর্জন।

কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রধানগণ ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap