– মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু
যাকাত কি শুধুই মুসলমান সম্প্রদায় দিবে না-কি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও যাকাত দিবে? যাকাত সব মানুষের জন্য ফরজ, কথাটা শুনলে কেমন জানি লাগে তাই না! ইহুদি হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ মুসলমান সহ যে কোনও জাতি বা সম্প্রদায়ের লোকজন হোক না কেন, যাকাত তাকে দিতেই হবে, যদিও সে প্রতিবন্ধী, অন্যের কাছে না হলেও এটা নিজের বিবেকের কাছে বাধ্যতামূলক।
অর্থাৎ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্য যাকাত অবশ্যই অবশ্যই ফরজ। কেউ টাকাপয়সা দিয়ে যাকাত দেয় আবার কেউ বিপদে (অসহায় অবস্থায়) পড়ে যাকাত নেয়। যিনি যাকাত নিলেন তাকেও যাকাত দিতে হবে কিন্তু কিভাবে? যিনি যাকাত দিলেন তাঁর জন্য খাসদিলে দোয়া করতে হবে, এটাই যাকাত গ্রহণকারীর জন্য বিশেষ একপ্রকার যাকাত, যা অন্যান্য যাকাতের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। যিনি যাকাত প্রদান করলেন তিনি সেই সম্পদ পেলেন কোথায়? সম্পদ দেয়ার মালিক আল্লাহ তাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এই কারণে যে, আমাকে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত দান করে অন্যের হক আদায় করার জন্য আমাকে মনোনীত করেছেন বলে, এটা সেই সব ধনাঢ্য ব্যক্তির আর্থিক যাকাতের পাশাপাশি আত্মিক ও নৈতিক যাকাত বলে বিবেচিত হবে।
আচ্ছা যার কোনও টাকাপয়সা নেই, যাকাত দেয়ার সামর্থ্য নেই তাহলে তিনি যাকাত দিবেন কিভাবে? শারীরিক শ্রম দিয়ে যাকাত দিবেন অর্থাৎ কাউকে বিনা পয়সায় উপকার করে দিবেন। মানবসেবা মূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে যাকাত আদায় করা যায়। যিনি শারীরিক ভাবে অক্ষম তিনিও দোয়ার মাধ্যমে অন্যদের কল্যাণ কামনা করে যাকাত দিবেন।
পশুপ্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে, পৃথিবী সহ সৃষ্টির ক্ষতিসাধন করা যাবে না, এটাও যাকাতের পর্যায়ভুক্ত। সুস্থ সবল সহ অসুস্থ মানুষকেও শারীরিক ও মানসিক যাকাত আদায় করতে হবে কারণ আমাকে অন্যদের তুলনায় ভালো রেখেছেন এরজন্য শুকরিয়া এবং আমাকে অসুস্থতা বা বিপদে ফেলে আমার গুনাহ মাফ করার সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছেন বলে শুকরিয়া। আরেকটি পদ্ধতি এখনও বলা হয়নি। যার উপর (আর্থিক) যাকাত ফরজ নয় তিনি যদি জ্ঞানী ব্যক্তি হন তাহলে তিনি তাঁর জ্ঞান বিতরণ করে যাকাত দিবেন! কিভাবে? যারা গবেষক, লেখক তাঁরা তাঁদের জ্ঞান দিয়ে, লিখিত কিতাব দিয়ে, শব্দ দিয়ে ভালো ভালো দিকনির্দেশনা মূলক শিক্ষনীয় বিষয়গুলো ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবেন, যাতে মানুষ ও সৃষ্টি জগৎ উপকৃত হতে পারে। এটাই হলো জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞানের উত্তম যাকাত।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে যে জ্ঞান দান করেছেন তার যাকাত হলো এটা। এভাবে যদি আমরা চিন্তাভাবনা করি তাহলে দেখা যায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাকাত বিরাজমান ও চলমান আছে। যাকাত শুধুই একটি নির্দিষ্ট দিনে দিতে হবে বিষয়টা তা নয়, আপনি সারা বছর যাকাত দিতে পারেন কোনও অসুবিধা নাই। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, প্রশ্ন করুন, আত্মসমালোচনা করুন, (যেমন ধরেন কেউ আপনার দ্বারা কষ্ট পেয়েছে কি-না বা অন্যায় করেছেন কি-না অথবা ভালো কাজ করতে পেরেছেন কি-না) যদি এভাবে জীবনবোধকে মূল্যায়ন করেন তাহলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
পায়ের যাকাত, হাতের যাকাত, চোখের যাকাত, জ্ঞানের যাকাত, দেহের যাকাত আদায় করুন। প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে, মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করতে হবে, ভুল হলে ক্ষমা চাইতে হবে। সত্যপথে চলতে হবে। মিথ্যা পরিহার করতে হবে। আলোর সন্ধান করতে হবে। ভালো পথে থাকতে হবে। সকল প্রকার খারাপ কাজ বাদ দিতে হবে। নারীদের ইজ্জত ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। পরিবার পরিজন ও বাপ মা, সন্তান এবং অন্যান্যদের হক আদায় করতে হবে।
সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় এবং প্রভুর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। অহিংসা ও মানবসেবা পরম ধর্ম, জীবের সেবা করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
অতএব হে মানব জাতি আসুন আমরা সকলেই ধর্ম বর্ণ, ধনীর গরীব ভেদাভেদ ভুলে যার যার ধর্ম মোতাবেক চলি এবং মানবসেবা করি, মনে রাখবেন যদি উল্লেখিত কাজগুলো করতে পারি তাহলে সৃষ্টিকর্তার সেবা করা হবে এবং নিজের মানসিক সেবাও পরিতৃপ্তি লাভ করবে আর হিংসা-বিদ্বেষ বাদ দিলে ধরণী হবে সুন্দর, উত্তম কর্মগুলো ছড়িয়ে দাও গ্রাম শহর হতে বন্দর।
বিদ্রঃ- আলোকিত মানুষের ধর্মজ্ঞান, দেবে পরিত্রাণ।