মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেন বাবা। খেয়ে না খেয়ে স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে, চাকুরী করে অভাবী সংসারে স্বচ্ছলতা আনবে। কিন্তু সেই বাবাই যখন ছেলের হাতে মারধরের শিকার হন তখন সেই বাবার কষ্টের সীমা থাকে না। এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলায়।
শিক্ষক ছেলের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক বাবা। ছেলে কর্তৃক বাবাকে লাথি মারা সহ লাঞ্ছিত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী বাবা। সে মামলায় ছেলে মজনুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল দশটার দিকে উপজেলার মহেলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে ছেলে মজনুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার মহেলা বাজার পোস্ট অফিসে সাব পোস্ট মাস্টার হিসেবে চাকুরী করেন ষাটোর্ধ ওই বাবা। তার ছেলে মজনুর রহমান চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত। তাদের মধ্যে জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ছিল। মঙ্গলবার সকালে মজনুর রহমান তার বাবার কর্মস্থলে যান। সেখানে অফিসে ঢুকে তার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং কিল, ঘুষি, লাথি মারাসহ বিভিন্নভাবে মারধর করেন।
একপর্যায়ে পোস্ট অফিসের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বাবার কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেন। পরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠতে চাইলে তাকে বাধা দেন বাবা। মোবাইলটি ফেরত চেয়ে কখনও ছেলের পা ধরে রাখেন, কখনও তার মোটরসাইকেল টেনে ধরেন। ওই সময় ক্ষুব্ধ ছেলে মজনুর রহমান তার বাবাকে লাথি মারেন। সেইসাথে বাবার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তিও করেন। পরে আশপাশের লোকজন এসে মজনুরকে নিবৃত করে তাড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মঙ্গলবার দুপুরের পর বিষয়টি চাটমোহর থানায় প্রথমে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাবা। পরে পুলিশ মজনুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বুধবার দুপুরে বাবার দায়েরকৃত মামলার পর ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঘটনার পর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত মজনুর রহমান বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। তার ভাগ্নে পরিকল্পনা করে ভিডিওটি করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাবা বলেন, ছেলের কাছ থেকে এমন আচরণ তিনি আশা করেননি। মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছেন তিনি। সে কারণে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার দাবি করেন ওই বাবা।
চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে বাবার প্রতি এমন আচরণ কাম্য নয়। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বাবা বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে মামলা করেছেন তার ছেলেকে অভিযুক্ত করে। মামলা নং ১৪। তারিখ-১৩/১০/২১ ইং। মামলার পরপরই ছেলে মজনুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, শুনলাম বাবা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমি মামলার কপি চেয়েছি। কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা কমিটির সদস্যরা বসে এ বিষয়ে কি করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।