আজ ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খনন যন্ত্রের চাপায় লিপু হত্যাকান্ড, থানায় লাশ রেখে ৫লাখ টাকায় রফাদফা

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :

 

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নে জালশোকা এলাকায় জোবায়ের হোসেন লিপু খুনের ঘটনাটি রাতেই থানায় বসে পাঁচ লাখ টাকায় রফাদফা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের হত্যা মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য নিহতের লাশ থানার সামনে রেখে রাত অবদি পুলিশের সাথে বৈঠক করে নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে রাজি করায়।

 

নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার এক আত্নীয় পুলিশ কর্মকতার্ আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম,জেলা পরিষদের সদস্য ফালাক মৃধাসহ কয়েকজন মিডিয়া কমর্ীর উপস্থিতিতে বসে আসামী পক্ষের লোকজন ক্ষতিপুরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

 

পরে পরিবারের অনুরোধে শিশু পুত্র খুনের মামলা না করে মীমাংসা পত্রে স্বাক্ষর করি। পরে লিপুর লাশ ময়না তদন্ত না করেই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাড়ীতে নিয়ে যাই। শুক্রবার সকালে নিহত লিপুর নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়েছে। আসামী পক্ষের লোকজন সিদ্ধান্তকৃত নগদ ৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

 

পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের উত্তর কাঞ্চনপুর গ্রামের দরিদ্র রাজ মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের হোসেন লিপু সকালে আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে বংশি নদীর পাড়ের একটি সরষে ক্ষেতে আসে।

 

পরে তিন-চারশত গজ দক্ষিণে অবস্থিত জালশোকা গ্রামের পাশেই সরষে ক্ষেত থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেউ। কৌতুল শিশুরা দৌড়ে সেই মাটি কাটা দেখতে এসে দাঁড়ায় মাটি কাটা ভেকুর কাছে। দীর্ঘক্ষণ তিনবন্ধু মিলে দেখ মাটি কেটে কিভাবে ড্রাম ট্রাকে তুলে। এক পর্যায় শিশুরা নরম মাটিতে খেলতে শুরু করে।

 

এসময় ভেকু চালক একাধিক বার শিশুদের খেলতে মানা করলেও শিশুরা না শুনলে চালক রাসেল ক্ষুব্দ হয়ে ভেকুটি শিশুদের উপর তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় দুই বন্ধু দৌড়ে সরে গেলেও দিপু ভেকু গাড়ীর চেইনের চাকার নিচে পড়ে মাটিতে ডেবে যায়।

 

এসময় চালক রাসেল পিছনে ভেকুটি নেওয়ার চেষ্টা করলে দিপুর মাথা ফেটে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। ভেকুর নিচে পড়েছে এ খবর অন্য শিশুরা দিপুর বাড়ীতে খবর দেয়। খবর পেয়ে দিপুর দাদা নেহাজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে প্রথমে গিয়ে চালককে ধরার চেষ্টা করেন। এসময় ভেকুর চালক ভেকু ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে শত শত গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে এসে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

 

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। সেখানে নিহতের লাশ নেওয়ার সাথে সাথে মাটি ব্যবসায়ী ও ভেকু চালকের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতারা থানায় তদবির শুরু করেন। এক সময় নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করতে চাইলে পুলিশের সাথে সমঝোতা করেন।

 

পরে নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে সন্ধ্যার পর থানায় ঢেকে এনে মীমাংসার জন্য দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাদী জাহাঙ্গীর আলমকে ছেলের ক্ষতিপূরণের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই সিদ্ধান্তে বাদী রাজি হলে পুলিশ নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেন।

 

আটাবহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জানান, নিহতের পরিবার দরিদ্র। তাই অর্থের ব্যবস্থা করে ঘটনাটি মীমাংসা করে দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ালাম।

 

কালিয়াকৈর থানার ওসি মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরি জানান, লিপু নিহতের ঘটনায় বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলার বাদী না হওয়ায় নিহতের লাশ স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আর্থিক নেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও জানান।

 

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap