আজ ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কালিয়াকৈরে ফের ময়নাতদন্তের ভয়ে কবর খুড়ে লাশ চুরির চেষ্টা

ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:

 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ফের ময়নাতদন্তের ভয়ে কবর খুড়ে এক নারীর লাশ চুরির চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, আলামত বিনিষ্ট করার জন্যই লাশ চুরির চেষ্টা করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বেনুপুর এলাকায় শুক্রবার রাতে।

 

নিহত নারী হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার আশাপুর এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে জুলেখা আক্তার শিখা (২৫)।

 

এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছর আগে শিখার সঙ্গে পারিবারিকভাবে পাশ্ববতী ঢাকার ধামরাই থানার যাদবপুর এলাকার আতাউর মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসানের বিয়ে হয়।

বিয়ের কিছু দিন পর তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ-বিবাদ শুরু হয়। এর জেরে স্বামী মেহেদী বিভিন্ন সময় স্ত্রী শিখাকে মারধর করতেন। এক পর্যায় মারধর করে স্ত্রী শিখাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় স্বামী মেহেদী ও তার পরিবারের লোকজন। গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বামী মেহেদী ও শ্বশুর আতাউরসহ কয়েকজন এসে নানা প্রলোভনে বাবার বাড়ি থেকে শিখাকে নিয়ে যায়।

পরে ১১ সেপ্টম্বর শ্বশুরবাড়ি থেকে শিখার লাশ উদ্ধার করে ধামরাই থানা পুলিশ। ওইদিন শিখার বাবা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে স্বামী মেহেদী, শ্বশুর আতাউরসহ কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ শহীদ সোহ্রাওয়াদর্ী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই সময় পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের একাধিক চিহ্ন উল্লেখ করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ আশাপুর-বেনুপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিহতের বাবা নারাজি দিয়ে ঢাকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফের ময়নাতদন্তের জন্য একটি আবেদন করেন।

পরে বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ৯ নভেম্বর একটি আদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশে গাজীপুরের একজন বিজ্ঞ নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে শিখার লাশটি উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্তে প্রেরণের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকতার্কে নিদের্শ প্রদান করা হয়। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে আজ (রোববার) শিখার লাশটি উত্তোলন করা হবে।

কিন্তু এর আগেই গত শুক্রবার রাতে কে বা কাহারা কবর খুড়ে শিখার লাশ উত্তোলনের চেষ্টা করে। টের পেয়ে নিহতের পরিবার কবরস্থানে যাওয়ার আগেই দুবর্ৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে সেখানে দুবর্ৃত্তরা কোদালসহ কবর খুড়ার সরঞ্জাম রেখে যায়।

নিহতের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে শিখাকে হত্যার পর ফাসিতে ঝুলে আত্নহত্যার চেষ্টা চালায় তার স্বামী মেহেদী ও তার পরিবারের লোকজন।

কিন্তু মেহেদী ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসককে টাকা খাইয়ে আত্নহত্যা বলে চালানো চেষ্টা করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সন্তাষজনক না হলে ফের ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করি। এরপর থেকে প্রতিরাতে আমরা কবরস্থানে পাহারা দেই। কিন্তু ওইদিন কবরস্থানে যেতে একটি দেরি হলে বিবাদী পক্ষ গুমের লক্ষ্যে করব খুড়ে আমার মেয়ের লাশ চুরির চেষ্টা করে।

এব্যাপারে জানতে ধামরাই থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, কবর খুড়ে লাশ চুরির চেষ্টার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে রোববার ধামরাই থানা পুলিশ লাশটি উত্তোলন করবে। আমাদের পুলিশ তাদের সহযোগীতা করবে।

 

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap