ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে খালের পাড়েই সায়িত করা হলো আদরের সেই ছোট্র শিশু লিপুমনি লামিয়াকে। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের কারণ রয়েছে এখনো অজানা। এ ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে তাদের দেড় বছরের ছেলে শিশু আলিফও।
নিহত হলো, কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর গজারিয়া এলাকার সাহেব আলীর মেয়ে লিপুমনি লামিয়া (৯)। সে টাঙ্গাইলের মিজার্পুর গোড়াই এলাকার আলোকিত হৃদয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বগুড়ার সদর থানার ফুলবাড়ি উত্তরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সুমন মিয়া (২৭) ও সুমনের স্ত্রী মিলি বেগম (২২)।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার আদরের লামিয়াকে গত বুধবার রাত ৯টার দিকে বাড়ির পিছনে সেই খালের পাড়েই চিরতরে শায়িত করা হয়েছে। চার ভাই-বোনের মধ্যে লামিয়া ছিল সবার ছোট। এ কারণে ভাইদের কাছে সে ছিল অত্যান্ত আদরের। অন্য দিকে তিন ছেলের পর শেষ বয়সে একমাত্র মেয়ে হওয়ায় মা শামীমাও তাকে রাখতো চোখে চোখে। বাবার কাছেও লামিয়া চোখের মধ্যমনি ছিল। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের পর পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ময়নাতদন্ত শেষে চিরতরে কবরে শায়িত হলেও লামিয়ার পরিবারের আহাজারি থামছেই না। এদিকে স্বার্ণালংকার লুটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাকে হত্যা বা ধর্ষণের পর তাকে হত্যা অথবা টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ তিনটি ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের পর তদন্ত চালিয়ে গেলেও ঘটনার তিন দিনেও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ জানা যায়নি। এদিকে ঘটনার তিন দিনেও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ উদঘাটন না হওয়ায় শিশু লামিয়ার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন কিছুটা হতাশায় পড়েছেন।
তবে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী পরিবারসহ স্থানীয়দের। এদিকে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সুমন ও তার স্ত্রী মিলিকে বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এসময় গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো স্বজনকে না পেয়ে পুলিশ বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দেড় বছরের ছেলে শিশু আলিফকেও আদালতে পাঠানো হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সুমন ও তার স্ত্রী মিলিকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া স্বজনকে না পেয়ে দেড় বছরের শিশু আলিফকেও তাদের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এ নৃশংস হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। এছাড়া সিআইডি বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পরিক্ষা করছে। তাদের প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর গজারিয়া এলাকায় ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী লামিয়াকে জবাই করে হত্যার পর সেফটি ট্যাংকির ঢাকনায় লাশ বেধে খালের পানিতে ডুবিয়ে গুমের চেষ্টা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটে সুমন। পরে পরিবারের সঙ্গে লামিয়াকে খোজতে খুনী সুমন গেলে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য তিনি কৌশলে লাশের উপর দাড়িয়ে থাকেন।
পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় নিহতের শরীরে জামা থাকলেও পরণের পাজামা খুলা অবস্থায় ছিল।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, স্বার্ণালংকার লুট বা টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্ব অথবা ধর্ষণের পর তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির ভাড়াটে সুমন মিয়াকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী মিলিকেও আটক করে পুলিশ। পরে স্ত্রী মিলিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।