নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশিষ্ট ব্যাংকার ফরমান আর চৌধুরী গত ১ অক্টোবর ২০১৮ দেশের অন্যতম বৃহৎ শরিয়াহ্-ভিত্তিক ব্যাংক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে ৫ বছর এবং ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাংকার চৌধুরী আল- আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে যোগদানের পর থেকে নতুন নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ করে আমানত ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করে ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায়, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রমোশন-ইনক্রিমেন্টের জটিলতা সহ কর্মকর্তাদেরর নানাবিধ সুযোগ সুবিধাসমুহ কমিয়ে আনেনে।
অপরদিকে দীর্ঘ দিনের অন্যতম শক্তিশালী ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শরীয়া বোর্ডের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করে নারী এবং পুরুষ মডেল দিয়ে শাখার অভ্যন্তরকে সুসজ্জিত করে ব্যাংকের সুদীর্ঘ শরীয়া ভিত্তিক অবস্থানকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক হওয়ার পরও আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে এর রি-ব্র্যান্ডিংর এর নামে নানাবিধ ভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন যা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা, গ্রাহক,শুভাকাঙ্ক্ষী এবং শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, ফরমান আর চৌধুরী ব্যাংকের বিভিন্ন জোনকে ডিভাইডেশন করে জোনের অন্তর্ভুক্ত শাখা সমুহের বিনিয়োগ আমানত ও মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যত্বয় ঘটান। যেমনঃ ঢাকা নর্থ জোনের শাখা এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা সহ আরও কিছু শাখা যা ঢাকার নিকটবর্তী সে সকল শাখা সমুহকে বগুড়া জোনে অন্তর্ভুক্ত করেন। ঢাকার নিকটবর্তী উপরোক্ত শাখা সমুহ বগুড়া জোনে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে অনেক ভালো ভালো বিনিয়োগ গ্রাহক ব্যাংক থেকে চলে যায় এবং নিকটতম কর্পোরেট ডিপোজিটও ব্যাপক হ্রাস পায়। ফলে সামগ্রিক ভাবে ব্যাংক তার অামনত বৃদ্ধি করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং মুনাফা অর্জনে বড় হোঁচট খায়।
সর্বশেষ কভির্ড ১৯ এর সময়ে স্থবির পৃথিবী এবং মানবসভ্যতা বড় চ্যালেঞ্জের মুখেও আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিরলস সেবা প্রদানের পরও; কর্মকর্তাদের মোট (গ্রোস) বেতনের ওপর ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমানো সিদ্ধান্ত হয় যা শীর্ষ স্থানীয় সকল মিডিয়াতে প্রকাশ হয়। ফলে ব্যাংকটির অবস্থার নিয়ে জনমনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং শত শত কোটি টাকার ডিপোজিট কমে যায়। এমডি ফরমান আর চৌধুরীর পরামর্শ এবং সিদ্ধান্তে দীর্ঘ দিনের পুরাতন শক্তিশালী ব্যাংকটির হঠাৎ বেতন কমানো নিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝেও চরম অসন্তুষ্টির কারন হয়ে দাড়ান এবং ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য চৌধুরী সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের তোপের মুখে পড়েন।
পূর্বে ব্যাংকের এমডি প্রয়াত মোঃ হাবিবুর রহমান নতুন নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন এবং ব্যাংকের আমানতের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটান। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। তার সময়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ব্যাংকের সকল বিভাগ, জোস এবং শাখা সমুহ কৃতিত্বের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা যায় ফরমান আর চৌধুরী আল-আরাফাহ্ ব্যাংক থেকে চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে চাপা উত্তেজনা সত্যি কি চৌধুরী বিদায় নিচ্ছেন? সর্বশেষ, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় গিয়ে কর্মকর্তাদের বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। কে হচ্ছেন; দেশের অন্যতম বৃহৎ শক্তিশালী শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে পরবর্তী এমডি ও সিইও? তিনি কি পারবেন প্রায় দুই বছর ধরে ঝিমিয়ে থাকা ব্যাংকটির নতুন নতুন শাখা, উপ-শাখা স্থাপন এবং আমানত ও বিনিয়োগের বৃদ্ধি ঘটাতে? তিনি কি পারবেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা আলহাজ্ব এ জেড এম শামসুল আলমের সেই মূল্যবোধে ফিরিয়ে আনতে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির এক অবঃ কর্মকর্তা বলেন- “ইসলামি মুল্যবোধ এবং আদর্শে বিশ্বাসী একমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কোন চৌকস কর্মকর্তা পারেন, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে শীর্ষে পৌঁছাতে, গৌরব ফেরাতে।”
আবার কেউ কেউ চাচ্ছেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অত্র বর্তমান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম জাফর অথবা সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ সিদ্দিকী কে। সময় বলে দিবে কোন পথে হাঁটছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। পথ হারাবে না; দেশের অন্যতম বৃহৎ শরিয়াহ্-ভিত্তিক ব্যাংক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে , এই আশা সকলের।
উল্লেখ্য চোধুরী আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ১৯৮৬ সালে যোগদানের মাধ্যমে তার কমর্জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৯ সালে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে প্রথম শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ২০১৩ সাল পযর্ন্ত কমর্রত ছিলেন।