আজ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪২ তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যায় দিবস আজ 

রাকিব হোসেন, ইবি প্রতিনিধিঃ

 

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর জন্ম হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। আজ নানা চড়াই উৎরাই পার করে কালের অবিচল সাক্ষী হয়ে গৌরব ঐতিহ্যের ৪১ বছর পেরিয়ে ৪২ বছরে পা রাখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

 

আজ ২২ নভেম্বর ৪২ তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। পিছনে ফেলে এসেছে ৪১টি বছর। শত বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে স্বাধীনতার পরবর্তী এ বিদ্যাপীঠটি। ৪১ বছরের এই পথ চলার মাঝে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি।

 

৪১ বছরের পথ চলায় প্রাপ্তি – অপ্রাপ্তিঃ

আগামী ২২ নভেম্বর ৪২ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত ৪১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তির ঝুড়ি কিছুটা পূর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠার পর এর অন্যতম একটি এজেন্ডা ছিল, এটিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে করে দেশীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পান। কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অভাবে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই।

 

সবুজে ঘেরা এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। দেশের গণমানুষের চাহিদা পূরণ করতে তৎকালীন সরকার ১৯৭৬ সালে ১লা ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার সীমান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০ (৩৭) পাস হয়।

 

১৯৮৬ সালের ২৮ জুন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে ৮ টি অনুষদ, ৩৪ টি বিভাগ, ৮ টি আবাসিক হল (৫ টি ছাত্র হল ও ৩ টি ছাত্রী হল) রয়েছে।

৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালটির বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৮০০০ জন। এছাড়া ৪১০ জন শিক্ষক, ৪২৫ জন কর্মকর্তা ও ২৯০ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এখানে প্রতিবছর স্নাতক কোর্সে ২৩০৫ আসনের বিপরীতে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৪ টি বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্মরণে নির্মিত মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল, মুক্তবাংলা, শহীদ মিনার, পানির ফোয়ারা, শ্বাশত মুজিব ম্যুরাল এবং ৭ই মার্চের ভাষণ সম্বলিত মুক্তির আহবান নির্মিত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে মনোমুগ্ধকর মফিজ লেক। যেটি বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। বিকাল হলেই এ লেকের নয়নাভিরাম পরিবেশ উপভোগ করতে শিক্ষার্থীরা সহ বাইরে থেকেও লোকজন ছুটে আসে ।

 

মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল লাইব্রেরি একসেস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বই ডিজিটাল লাইব্রেরির আওতায় আনা হয়েছে। এ অটোমেশনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সহজে সার্চ করে কাঙ্খিত বই খুঁজে পাবেন এবং বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারবে।

 

ইতিমধ্যেই সবচেয়ে বড় সমস্যা সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাজেট পেয়েছে ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প। এ মেগাপ্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ, ১২টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, ২টি ৫০০ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে।

 

আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাশ হয়েছে অর্গানোগ্রাম। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভের পর ৪১ বছর পেরিয়ে ৪২ বছরের এক নব যৌবনে এসে পা দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিভাবকত্ব করেছেন ১২জন খ্যাতিমান ব্যক্তি।

 

এতগুলো প্রাপ্তির মাঝেও কিছু অপ্রাপ্তিও রয়েছে। আবাসন সংকট এর মধ্যে অন্যতম। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় ১৭ হাজার। কিন্তু মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী থাকতে পারছেন প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে যাতায়াতের জন্য পরিবহন নির্ভর শিক্ষার্থীরা। বছর ঘুরে শিক্ষার্থী বাড়লেও পরিবহন সংকট থেকেই যাচ্ছে । যার কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয়ের দশ শতাংশ গুনতে হয় পরিবহনের পেছনে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজ, অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিসহ বেশকিছু বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।

 

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, ঐতিহ্য ও গৌরবের আরেকটি অধ্যায়ের সূচনায় অতীতের সকল অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা এবং প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাফল্যের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাক ভালোবাসার প্রিয় ক্যাম্পাসটি। সকল বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করে জঙ্গি, মাদক, অপরাজনীতিমুক্ত সহ সেশনজট ও আবাসন সংকট নিরসন করে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং গবেষণাখাতে এগিয়ে যাবে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রত্যাশা রইলো।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অধ্যায়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, প্রথমেই বলব মহামারী করোনা কাটিয়ে আবারও ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা তা অভ্যাহত থাকুক। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে এখন শিক্ষক হয়েছি। তাই আমি মনে প্রাণে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা আরও বৃদ্বি হয়ে সপ্নের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হোক।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দূর্গ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap