আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে ইউরোপ ভুখন্ডের পটপরিবর্তন: সর্বশেষ পরিস্থিতি

আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান একটি বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। প্রায় ২০০ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের দুই শতাধিক সৈন্যকে হত্যার পর ওই ঘাঁটি দখল নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করতে ২০০টি হেলিকপ্টার এবং সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন ব্যবহার করা হয়েছে। হোসটোমেল বিমানবন্দর দখলে নেওয়ায় ভারী সামরিক সরঞ্জাম এবং সৈন্য পরিবহনকারী রাশিয়ার বিমান অবতরণ করতে পারবে সেখানে। বিমানবন্দরটিতে দীর্ঘ রানওয়ে থাকায় রাশিয়া থেকে সরাসরি কিয়েভের ওই বিমানবন্দরে সৈন্য পরিবহন করা যাবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ বলেছেন, রাশিয়ান বিমানবাহিনী হোসটোমেল দখলে নেওয়ার জন্য ২০০টি হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ২০০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে।

তবে এই অভিযানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কোনো হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও ইউক্রেন পাল্টা দাবি করে বলেছে, হোসটোমেল বিমানবন্দরে সংঘর্ষে ব্যাপক রুশ সৈন্য হতাহত হয়েছে। এদিকে, কিয়েভ শহরের মেয়র বলেছেন, ইউক্রেনের রাজধানী এখন প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় মস্কো প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নব্য-নাৎসিরা ইউক্রেন শাসন করুক মস্কো তা চায় না। শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ সৈন্যদের প্রবেশের পর এসব কথা বলেছেন তিনি।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এর জবাবে রাশিয়াও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছে। শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমের দেশগুলোর উদ্দেশে এই সতর্কবার্তা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ আরও বলেন, ‘পাশ্চাত্যের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া সমস্যায় পড়বে— এটি সত্য, কিন্তু সেসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না; কারণ গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে।’

২০১৪ সালে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনের মুখে রাশিয়া-সমর্থিত ইউক্রেনের সরকারের পতন ঘটে। এরপর সামরিক অভিযান চালিয়ে কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। একই সঙ্গে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াইরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানায় মস্কো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু হওয়া রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আগ্রাসনের প্রথম দুই দিনে ১ হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। শুক্রবার রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ঢুকে পড়ার পর এই দাবি করেছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। রাশিয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোনো সশস্ত্র সংঘাতেই এত বেশি সৈন্যের প্রাণহানির শিকার হয়নি।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে এখন পর্যন্ত হতাহত কত?

বিভিন্ন সূত্র থেকে ইউক্রেনে সংঘর্ষে হতাহতের অনেক পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তবে সেসব পরিসংখ্যান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

• ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সংঘাতে রাশিয়ার এক হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে।

• ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি বলেছেন, রাশিয়ার ৪৫০ সৈন্য এবং ইউক্রেনের ৫৭ বেসামরিকসহ কমপক্ষে ১৯৪ সৈন্য নিহত হয়েছেন।

• অন্যদিকে, জাতিসংঘ বলেছে, ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ বেসামরিক নিহত এবং আরও ১০২ জন আহত হয়েছে।

• রাশিয়া বলেছে, রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান হোসটোমেল বিমানবন্দর দখলের সময় ২০০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ছোট স্নেক আইল্যান্ডে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় ১৩ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে।

• বৃহস্পতিবার ইউক্রেন জানায়, রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য নিহত ও আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।

কিয়েভ শহরের মেয়র বলেছেন, ইউক্রেনের রাজধানী এখন প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশটিতে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার ভারতীয়। তারা এখন চরম উদ্বেগে দিন পার করছেন।

ইউক্রেনের ন্যাশনাল প্রিগভ মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের ছাত্রী নদীয়ার হরিণঘাটার ছাত্রী এশা ভৌমিক জানান, বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়েছে, কোনো সুবিধা নেই, অনবরত বোমা হামলা চলছে। আজ সকালেও বোমা হামলা হয়েছে শহরে।

২০১৮ সালের পূর্বস্থলীর চুপি কালীতলা এলাকার বাসিন্দা শেখ আকিব মোহাম্মদ খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে যান। বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের মধ্যে সেখানেই আটকে আছেন তিনি।  বৃহস্পতিবার থেকে তাকে রাখা হয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও ৫০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী। আকিবের চেহারা একটু স্থূল হওয়ার কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডের নিচে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার।

পরিবারকে তিনি জানান, এরই মধ্যে দেশটিতে এটিএম বন্ধ হয়ে গেছে। তার কাছে কিছু শুকনো খাবার। সেটা শেষ হয়ে গেলে চরম বিপদে পড়বেন তিনি।

এদিকে ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন বসিরহাটের অর্পণ মণ্ডলও। অর্পণও ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দেশটিতে যান তিনি। ডিনাপ্রো পেট্রোভাক্স হোস্টেলে আছেন তিনি।

ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের রামকৃষ্ণ পল্লীর দাস পরিবারের সন্তান পাভেল দাস। তিন বছর আগে পাভেল দাস ডাক্তারি পড়তে পাড়ি দেন ইউক্রেনে। বর্তমানে তিনি ইউক্রেনের টার্নফিল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। মার্চ মাসের ৭ তারিখ বাড়ি ফেরার জন্য টিকিটও করেছিলেন। হঠাৎ ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার কারণে আটকে পড়েছেন তিনি। সেখানকার পরিস্থিতির কথা তিনি ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের জানিয়েছেন। ইউক্রেনের টার্নফিল শহরে প্রায় ২ হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap