আজ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জমি খনন করে অসহায় কৃষকের বাড়ি ধসিয়ে দেয়ার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি:

পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে ধামরাইয়ে এক কৃষকের বাড়ির ওয়াল ঘেঁষে খাল খনন করে ধসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, একই এলাকার মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে।

 

ভুক্তভোগী কৃষক রিবল পিতা-মৃত আমেজ উদ্দিনের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই থানার দক্ষিণ খয়রারচর গ্রামে।

রিবল অভিযোগ করে বলেন, তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি ওয়াল করা টিনশেড বাড়ি তৈরি করেন, একই এলাকার মোহাম্মদ আলী (৪৫) পিতা-মৃত নকুমদ্দিন এর বাড়ির সামনে জায়গা ক্রয় করে।

দীর্ঘদিন ভালো ভাবে বসবাস করে আসলেও মোহাম্মদ আলী বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তার বাড়ির ওয়াল ঘেঁষে মোহাম্মদ আলীর জমি থেকে প্রথমে মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করে, এতে প্রাথমিকভাবে ওই জায়গাটি ছোটখাটো গর্তে পরিণত হয়। এর কিছুদিন পর মোহাম্মদ আলী, আবারো একই জায়গায় ভেকু দিয়ে প্রায় ৩০ ফিট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যায়, যার ফলে জায়গাটি একটি পুকুরে পরিণত হয়।

ভুক্তভোগী কৃষক রিবলের দাবি অনুযায়ী বাড়ির চারপাশে তিন ফিট জায়গা থাকলেও অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী সেই তিন ফিট জায়গার মাটিও কেটে নিয়ে যায়। মাটি কাটার সময় এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে দেয়াল ঘেঁষে এত গভীর করে মাটি কাটতে নিষেধ করলেও মোহাম্মদ আলী সে নিষেধ উপেক্ষা করে খনন কাজ চালু রাখে এবং এলাকাবাসীর সামনে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে। এভাবে মাটি কাটার ফলে আধাপাকা বাড়িটি ভেঙে যায় ও ঘড়ে থাকা আসবাবপত্র সহ দশ থেকে পনেরো লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষক রিবল।

 

ক্ষতিপূরণের দাবি করলে  মোহাম্মদ আলী দিতে অস্বীকার করে। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালে চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী ধামরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে কৃষক রিবল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী কৃষক রিবলের বিরুদ্ধে ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি রাস্তা মেরামতের সময় ইউনিয়ন পরিষদের ছলিম দফাদার কে কিছু টাকা দিয়ে মাটি কাটি আমার জায়গা থেকে। ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় কতটুকু গভীর হয়েছে আমি জানিনা। তবে আমি কারো জায়গায় মাটি কাটিনি। তার বাড়িটি বন্যায় ভেঙে পড়েছে আমার মাটি কাটার জন্য নয়।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা আগে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পুলিশ নিয়ে আসছে তাই পড়ে আমিও তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলা করেছি।

রিবল আমার কাছে এ বিষয়ে কোন কিছু না জানিয়েই থানায় অভিযোগ করে। তবে আমিও চাই বিষয়টির সমাধান হোক। আমার জন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ আমি দিতে রাজি আছি।

 

এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শংকর সরকার বলেন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে, অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীকে আমরা থানায় ডাকলে তিনি থানায় আসেনি । পরবর্তীতে তিনি সময় চেয়ে, ধামরাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে দিয়ে আমাকে ফোন করেয়ে বিষয়টি স্থানিয় ভাবে মীমাংসা করার কথা বলেন।

ধামরাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহাদ্দেসের সঙ্গে এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, তার মুঠোফোনটি রিসিভ না হওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি খয়রারচর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাজেদ হোসেনকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন।

খয়রারচর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাজেদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বলেন। আমি সরোজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখি ও জানতে পারি অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী খয়রারচর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার কে টাকা দিয়ে ইউনিয়নের সরকারি রাস্তার কাজে লাগানো ভেকু ব্যবহার করে এই পুকুরটি খনন করে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অবগত ছিলেন। এবং পুকুর খননের মাটি দিয়ে চেয়ারম্যান রাস্তা মেরামতের কাজ করেছেন।

 

তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দিকে অভিযোগ করে বলেন, অভিযোগটি সর্বপ্রথম ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিন্টু চাইলে সমাধান করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং বিষয়টিকে থানা এবং মামলায় জড়িয়ে দেন । ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ইউনিয়নের এ ধরনের ঝগড়া-বিবাদ গুলোকে আরো বাড়িয়ে দেন এবং এর থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেন। এখন যেহেতু আমার কাছে বিষয়টি আসছে আমি সময় করে একটি বিচারের ব্যবস্থা করব।

খরারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু  মিয়া বলেন আমার কাছে কৃষক রিবল অভিযোগ করলে আমার মহিলা মেম্বার সহ পরিষদের দফাদার ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে আমি তাকে ধামরাই থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ করার পরামর্শ দেই। যেহেতু থানায় অভিযোগ হয়েছে বিষয়টি থানায় ওসি সাহেব সমাধান করে দিবে।

ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গ্রাম্য সালিশের কথা ও অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, যে ব্যক্তি কৃষক রিবল এর ক্ষতি করেছে তারা প্রভাবশালী, আমি ডাকলে হয়তোবা আসবেনা। এছাড়াও বিষয়টি যেহেতু থানা এবং পরবর্তীতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেনেছেন, তাই আমি আর বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলিনি।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap