রিজয়েস বিশ্বাস
স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বা সিভিএ) হলো একটি জরুরি অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে স্নায়ু কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট অংশগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এটি গুরুতর শারীরিক অক্ষমতা, মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিট মূল্যবান।
স্ট্রোক প্রধানত দুই প্রকারের হয়: ইস্কেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তনালিতে বাধা সৃষ্টি হলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, যা মস্তিষ্কের অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহকে বিঘ্নিত করে। হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালি ফেটে গেলে সেখানে রক্তপাত হয়, যা স্নায়ুকোষের ক্ষতি করে।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই দেখা দেয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুখ, হাত বা পায়ের দুর্বলতা, কথা বলায় সমস্যা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, ভারসাম্যহীনতা এবং তীব্র মাথাব্যথা।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যগ্রহণ, ধূমপান ত্যাগ, এবং রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ঝুঁকি চিহ্নিত করা জরুরি।
স্ট্রোকের পর পুনর্বাসন চিকিৎসা রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক পুনর্বাসনে সাহায্য করে।
স্ট্রোকের ফলে রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে: যোগাযোগ সমস্যা: যেমন, কথা বলতে বা বুঝতে না পারা (অ্যাফাসিয়া), জড়িয়ে কথা বলা (স্লারড স্পিচ)। কণ্ঠস্বর সমস্যা: যেমন, শ্বাস ধরে রাখতে না পারা, কর্কশ কণ্ঠস্বর। গলধঃকরণ সমস্যা (ডিসফেজিয়া): শ্বাসনালীতে খাবার প্রবেশ করা, ঢোক গিলতে সমস্যা।
স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি এই ধরনের সমস্যা নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে বাংলাদেশে এখনও স্ট্রোক রোগীদের গলধঃকরণ সমস্যা (ডিস্ফেজিয়া) যথাযথভাবে চিহ্নিত ও চিকিৎসা করা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিটি স্ট্রোক রোগীর ক্ষেত্রে গলধঃকরণ জটিলতার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রক্রিয়াটি অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হচ্ছে। কারণ হলো, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন পাস করা হলেও, এখন পর্যন্ত আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স সম্পন্নকারী ব্যক্তিদের লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি।
লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পান এবং অপচিকিৎসার শিকার না হন। সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ও যোগ্য স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে রোগীরা সর্বোত্তম সেবা পেতে সক্ষম হবে এবং তাদের জীবনমান উন্নতি লাভ করবে। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা তুলে ধরার জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।