আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এবছরে’ই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫জন বাতিলসহ ১১ শিক্ষার্থী বহিষ্কার 

নাইমুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি-
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২৩ সালের বছরজুড়ে আলোচিত ছিল র‍্যাগিং, ভাঙচুর এবং মারামারি। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ১১ শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছেন। আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারই সব থেকে বেশি শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
চলতি বছরের গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গণরুমে এক নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এর দায়ে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনের ছাত্রত্ব বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬০তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্থায়ী বহিষ্কৃত অন্য অভিযুক্তরা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, একই বিভাগের ২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মিম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
এছাড়া, মেডিকেল ভাঙচুরের ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার চলতি বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে যান কাব্য। এ সময় কর্ত্যবরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন তাকে ইনজেকশন দেন। এর আধঘণ্টা পর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া পাঠানোর জন্য ডাক্তারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন কাব্য। ডাক্তার তাকে গুরুত্বর পরিস্থিতি ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয় না বলে জানান। এরপর চিকিৎসা কেন্দ্রের অফিসের টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার শাহিনুজ্জামানকে মারধর করেন কাব্য ও তার সঙ্গীরা। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, আইন বিভাগের ছাত্র রেজোয়ান সিদ্দিক কাব্য, র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী হিশাম নাজির শুভ এবং মিজানুর রহমান ইমন।
র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার
চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থী লিখিতভাবে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে। তদন্ত করতে গিয়ে উভয় কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। এ ঘটনায় তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার পুলক, শেখ সালাউদ্দীন সাকিব ও সাদমান সাকিব আকিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কাজ পড়াশোনা করা। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গ এবং পরিবেশের কারণে তারা অপরাধ ও মাদকে জড়িয়ে পড়ে। নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে শিক্ষাজীবন নষ্ট করে ফেলে। আমরা চাই কেউ তাদের শিক্ষা থেকে যেন বিচ্যুত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপেক্ষর কঠোর সিদ্ধান্ত অন্যান্য শিক্ষার্থীকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। যদিও শাস্তিপ্রাপ্তদের জন্য খারাপ লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, প্রতিটি ঘটনার আলোকে তদন্ত কমিটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধি মোতাবেক ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের আলোকে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাই।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap