আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একই পরিবারের ০৩ জন’কে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

সাভারে একই পরিবারের তিন জনকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করেছ র‍্যাব। মূলহোতা সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম’কে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‍্যাব বলছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

৩ অক্টোবর ( মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১১ টায়, র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক, এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও গ্রেফতারের বিষয়ে গনমাধ্যমকে জানান।

গ্রেফতারকৃত সাগর আলী টাংগাইল জেলার মোবারক @মোগবর আলীর ছেলে । ও তার অন্যতম সহযোগী (স্ত্রী)  ঈশিতা বেগম (২৫) এর গ্রামের বাড়ি, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুরে।  তাদের কাছ থেকে, হত্যাাকান্ডের সময় ভিকটিম মোক্তারের কাছ থেকে লুটকৃত আংটি উদ্ধার করা হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে, খবর পেয়ে উক্ত ফ্ল্যাট থেকে, ঠাঁকুরগাও জেলার পীরগঞ্জ থানার লোহাগড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে বাবুল হোসেন (৫০), তার স্ত্রী সহিদা বেগম (৪০) ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয় (১২) এর অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্ত্রী সাহিদার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে ০১ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নম্বর নং-০৪/৭১৬,।

র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক, খন্দকার আল মোইন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা অর্থের লোভে ও কাঙ্ক্ষীত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকে কবিরাজি ও ভেষজ ঔষধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে। গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে মোক্তার কবিরাজি চিকিৎসায়  ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোন ফল পায়নি। তাই সাগর কৌশলে মোক্তারের  সাথে কথাবার্তা বলে জানায় যে, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দিবে। এই মিথ্যা আশ্বাসে উক্ত চিকিৎসার জন্য ভিকটিম মোক্তারের সাথে ৯০০০০/- (নব্বই হাজার) টাকায় চুক্তি করে। গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর  পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং ইসবগুলের শরবতের সাথে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে তাদেরকে কবিরাজি চিকিৎসার ঔষধ বলে খাওয়ায়। তারা ঘুমের ঔষধে ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী প্রথমে মোক্তারের হাত ও পা বাধে, পরবর্তীতে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাধে। এসময় ভিকটিম মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে তল্লাশি করে মাত্র ৫০০০ টাকা পায়। কাঙ্খিত অর্থ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয় এবং বটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলায় উপর্যপুরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে অন্য কক্ষে গিয়ে ছেলে ও স্ত্রীকে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করে মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়ে যায় তারা। এরপর ঘটনাস্থল থেকে তারা ভিন্নপথে গাজীপুরের মৌচাকে শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) অবস্থান করতে থাকে। হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার হলে তারা দুজন অন্যত্রে আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকাকালীন গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে  র‍্যাব-৪ গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত সাগর মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতো বলে স্বীকার করে। সে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের ০৪ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটায়। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap