বিশেষ প্রতিনিধি-
সাভার উপজেলায় করোনা টিকা প্রদানে পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নে অতিরিক্ত ২৬টি কেন্দ্রে ২৬(ফেব্রুয়ারি) থেকে গণটিকার কর্মসূচি চালু হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে একদিনের জন্য গণ টিকা কর্মসূচি শুরু হলেও টিকা গ্রহণকারীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে না পেরে, সময়সীমা বাড়িয়ে আরো দুইদিন করা হয়েছে। যা অতিরিক্ত এই ২৬ টি কেন্দ্রে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
প্রথম দিন ভোর থেকেই মানুষের উপচে পড়া ভীড়, সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। মানুষের ভিড় এবং চাপে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিরা আহতসহ হয়ে পড়ছেন অসুস্থ।
ভোর হতে না হতেই টিকা গ্রহণের উদ্দেশ্যে মানুষ কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করলেও টিকা প্রদান শুরু হয় সকাল দশটার পর থেকে। ভোগান্তি কমাতে আরও সকাল থেকে টিকাদান শুরুর দাবি সাধারণ মানুষের।
চরম বিশৃঙ্খলায় ধাক্কাধাক্কিতে আহত ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। রবিবার দ্বিতীয় দিনে আগের দিনের মতোই ভোর থেকেই সাভার পৌর এলাকায় বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে টিকা প্রত্যাশীদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষের গাদাগাদিতে চরম বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ে।
পৌরসভা ও ইউনিয়নের ওয়ার্ডসহ প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে মানুষের প্রচণ্ড ভীড়ের কথা জানিয়েছে প্রশাসনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সাভারে বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে ভোর ৫টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় নাগাদ টিকা দিতে পারেননি পোশাক কারখানার শ্রমিক ঈসমাইল হোসেন।
ঈসমাইল আজকের দর্পণ কে বলেন, প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার জন্য ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের বিশৃঙ্খলায় লাইন ভেঙে যাচ্ছে। লাইননে না থেকে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে সবাই। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কথাও কেউ মানছে না। এই অবস্থায় কতক্ষণ পর টিকা দিতে পারবো জানি না।
হায়দার আলী নামে আরেক টিকা প্রত্যাশী আজকের দর্পনকে বলেন, শুনেছি গতকাল অনেকে সুষ্ঠু ভাবে টিকা দিতে পেরেছে, আজ এসে দেখি চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ভীড় যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় ভীড় ঠেলে কিভাবে টিকা নেব বুঝতে পারছি না। অপরদিকে ভোর ৫টা থেকেই আশুলিয়ার ডেন্ডাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অসংখ্য নারী ও পুরুষ টিকা নিতে ভীড় জমায়। যা সকাল ৯টা নাগাদ মানুষের লাইনের দীর্ঘ সাড়ি স্কুল মাঠ ছাড়িয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কসহ ফুটপাতে চলে আসে।
উপজেলার প্রায় সব গুলো টিকা কেন্দ্রেই একই চিত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। ভোর ৬টা থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছেন স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক আনোয়ারা বেগম।
সকাল ৯টা নাগাদ তার অবস্থান মহাসড়কের ফুটপাতের দীর্ঘ সাড়িতে। তবে ততক্ষণে তিনি জানতে পারেন তাকে টিকা দিতে হবে সাভার উপজেলায় গিয়ে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। আনোয়ারা আজকের দর্পণকে বলেন, ‘টিকা নিতে দাড়াইছি ভোর ৬টা বাজে। এখন আবার ওনারা বলতাছে সাভার যান। এটি কি ঠিক হলো? অফিস অ্যাফসেন (অনুপস্থিত) কইরা আইজকা আসছিলাম। এখন একদিনের এক হাজার ট্যাকা মাইর (কাটা)। তাহলে ক্যামনে আমরা চলমু? আমরাতো গরীব মানুষ।’ পোশাক শ্রমিক নূরজাহান বেগম আজকের দর্পণকে বলেন, অফিস থাইকা ছুটি নিয়া সকাল ৮টা বাজে আইসা দাড়াইছি। টিকা নিয়া আবার অফিসে যাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক বড় লাইন। কখন টিকা নেয়া শুরু করবো কইতে পারি না। দেরি হলে গার্মেন্টেও ঢুকতে দিবো না। হাজিরার ট্যাকা কাইটা নিবো।
জাহাঙ্গীর হোসেন নামে আরেকজন বলেন, অনেকেই রাত ভোর ৩-৪টার দিকে আসছে। কিন্তু সকাল পৌনে ৯টা বাজে এখনও ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করে নাই। মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আরও আগে থেকে টিকা দেয়া উচিত ছিলো।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম বলেন, আজকে পৌর এলাকার সব গুলো টিকা কেন্দ্রে মানুষের অনেক ভীড়। আমাদের পুলিশও পর্যাপ্ত আছে। ইউএনও সাহেবকে আনসার সদস্য দেয়ার জন্যও বলেছি। মানুষ যখন সেবা পায় তখন তার প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ‘আজকে অবস্থা খুব খারাপ। হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে ভীড় করছে। আমি নিজে মাইকিং করছি মানুষ যাতে সুষ্ঠু ভাবে টিকা নেয়।
’ প্রসঙ্গত, সাভারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে গত ৫ দিনে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষকে গণটিকা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত আরও ৫০ হাজার মানুষকে টিকা প্রদানের টার্গেট নেয়া হলেও তা এখন বাড়ি এক লক্ষ জনকে দেয়ার টার্গেট নেয়া হয়েছে।