ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গেইটম্যানের গাফলতিতে শনিবার ভোরে যাত্রীবাহী ট্রেন ও বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। এদিকে ঘুম থেকে উঠে দুর্ঘটনা দেখেই পালিয়ে গেলেন দায়িত্বে থাকা গেইটম্যান। অপরদিকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নিহতরা হলেন- নেত্রকোনার কমলাকান্দা থানার কৃষ্ণপুর এলাকার সামছুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫) ও একই থানার বটতলা এলাকার বাবুল মিয়ার স্ত্রী করিমা বেগম (৩০)। আহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের জেলার কাজুলিয়া গ্রামের আকতার সরকারের ছেলে কামরুল সরকার, নেত্রকোনা জেলার কামলাকান্দা গ্রামের মোস্তফা আলীর ছেলে মানিক মিয়া, একই জেলার নিজামপুর গ্রামের শাহ নেওয়াজের ছেলে হারুন মিয়া।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ট্রেনের যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রাজশাহী রেললাইনের কালিয়াকৈর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় লেবেলক্রসিংয়ে শনিবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। উত্তরবঙ্গের চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে নীল সাগর এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন ঢাকা যাচ্ছিল। অপর দিকে জালালাবাদ এন. কে সিয়াম পরিবহন বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকায় ইটখোলার শ্রমিক নামিয়ে রেখে দিয়ে নেত্রকোনার দিকে ফিরছিল। ফেরার পথে ওইদিন ভোর ৪টার দিকে উপজেলার সোনাখালী এলাকায় ওই লেবেলক্রসিং গেইট বেরিয়ার না ফেলায় বাসটি রেললাইনের উপর উঠে আটকে যায়। ট্রেন আসার টের পেয়ে বাসের চালক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ট্রেনের চালক ট্রেনটি থামানো চেষ্টা করলেও বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ট্রেনের সাথে বাসটি আটকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে গিয়ে পাশের ভুঙ্গাবাড়ি এলাকায় রেললাইনের উপর দুমড়ে-মুচড়ে পড়লে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসে আটকে যাওয়া চারজনকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। এসময় কাটার মেশিন দিয়ে বাসের বিভিন্ন অংশ কেটে ঘটনাস্থল থেকে করিমা বেগম এক নারীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে মাসুদ রানাকে মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া ট্রেনের যাত্রী ও তাদের মালামাল রক্ষায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই দুর্ঘটনার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম দুভোর্গে পড়েন ওই ট্রেনসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনের দাড়িয়ে থাকা ট্রেনের যাত্রীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে উদ্ধার কমর্ীরা রেললাইনের উপর থেকে দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সরিয়ে নেয়। এ ঘটনার প্রায় ৬ ঘন্টা পর ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় লোকজন ও ট্রেন যাত্রীদের অভিযোগ, ওই লেবেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বে থাকা রিপন হোসেন ঘুমিয়ে থাকায় গেইট বেরিয়ার নামানো হয়নি। যার কারণে ট্রেন আসার আগমুহুর্তে বাসটি রেললাইনে উঠে পড়ে এবং ট্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে। দায়িত্বরত গেইটম্যান রিপন ঘুম থেকে জেগে দুর্ঘটনাটি দেখে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন ও বাসটি উদ্ধার না করেই লেবেল ক্রসিং থেকে পালিয়ে যায়। একই ধারণা করছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও রেল সংশ্লিষ্টরাও। এদিকে ট্রেন-বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কতর্ৃপক্ষ। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যান রিপনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ওই ট্রেনের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গেইটে বেরিয়ার না ফেলায় বাসটি রেললাইনের উপর উঠে আটকে যায়। পরে চালক হার্ড ব্রেক করলেও বাসের সঙ্গে লেগে যায়। ট্রেনের সাথে বাসটি আটকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে যায়।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকতার্ কবীরুল আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার এবং আহতদের উদ্ধার করা হয়। পরে আটকে যাওয়া বাসটি সরিয়ে দিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোরশেদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেন যাত্রী ও তাদের মালামাল রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান জানান, খবর পেয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জয়দেবপুর রেলস্টেশন মাস্টার শাজাহান মিয়া জানান, এ দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যান রিপনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।