নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ
অমর একুশে বইমেলা ২০২১ কে সামনে রেখে নেত্রকোণার নবীন কবি রাসেল হাসানের “জ্যোৎস্নাধোয়া রাত” কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ হয়েছে।
বইটি সময়ের সুর প্রকাশনী থেকে এসেছে গত ২৭শে ডিসেম্বর। দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, প্রেম-বিরহ, বিদ্রোহ থেকে শুরু করে প্রায় সমসাময়িক সকল বিষয়ের অসাধারণ সব কবিতা স্থান পেয়েছে বইটিতে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সেই অসাধারণ একটি বই প্রকাশ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সর্বস্তরের সাহিত্য প্রিয় মানুষদের। বইটি পড়ে বিভিন্নভাবে কবি ও বইটির প্রশংসা করছেন নেত্রকোণার সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সর্বস্তরের পাঠকরা।
বইটির প্রসঙ্গ কথা লিখেছেন একুশে পদক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা।
প্রকাশকের কাছ থেকে জানা যায়, একুশে বইমেলায় ‘জ্যোৎস্নাধোয়া রাত’ কাব্যগ্রন্থটি পাওয়া যাবে ৩৪৬ নম্বর স্টলে। এমনকি
নেত্রকোণা জেলা শহরের রূপক লাইব্রেরিসহ রকমারিতেও পাওয়া যাচ্ছে বইটি।
শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার বলেন, বইটি পড়ে আমি অভিভূত হয়েছি। এত সুন্দর চিন্তাধারা, এত সুন্দর কথামাল্য আমাকে অভিভূত করেছে।
এদিকে বাংলা একাডেমী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা জ্যোৎস্নাধোয়া রাতের ভূমিকায় লিখেছেন, তরুণ প্রতিভাবান কবি মোঃ রাসেল হাসান এর লেখাগুলো পাঠ করে জানতে পারলাম সত্যিই অসাধারণত্ব রয়েছে তাঁর লেখায়। শুনেছি সে নাকি নবম শ্রেণীতে পড়ে। এত অল্প বয়সে এত সুন্দর ছান্দসিক কথামালা কিভাবে কাটতে পারে তা সত্যিই অকল্পনীয়।
জ্যোৎস্নাধোয়া রাত কাব্যগ্রন্থটিতে স্থানকৃত প্রতিটা কবিতা আপনাকে নিয়ে যাবে উদাসীন কল্পরাজ্যের । পরিশেষে বলতে চাই , বাংলা সাহিত্যে কে ভালবাসুন, এই বইটি পড়ুন, নবীন কবিকে সাদরে বরণ করে নিন ভালোবাসার নিবাসে।
নবীন কবি রাসেল হাসান নেত্রকোণা সদর উপজেলার মৌগাতী ইউনিয়নের নগুয়া কুশলগাওঁ গ্রামের আনসার সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ও গৃহীনী মোছাঃ আনোয়ারা আক্তারের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনা করছেন স্থানীয় মারাদিঘী গোলাম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে।
কবি রাসেল হাসান ২০০৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি বাংলা সাহিত্যের ঘাটি নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢুপিখালী নদীর তীরবর্তী নগুয়া কুশলগাঁও গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা। নদীর মতোই চঞ্চল ও রহস্যঘেরা এক বিস্ময় বালক।
কবি বলেন, রাতেই তিনি কবিতাকে বেশি প্রসব করেন। রাত দ্বিপ্রহরে প্রায়ই ঘুম ভেঙে যায়। উঠে কবিতা লেখা শুরু করেন। আবার জ্যোৎস্না রাত থাকলে চন্দ্রবিলাস করতে করতে কেটে যায় রাতের দুইভাগ সময়। ঢুপিখালীর কূলে বসে দেখেন জ্যোৎস্না ও জলের খেলা।
মোঃ রাসেল হাসান বলেন, “আমার একটা ইচ্ছে ছিল যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৫বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। আমি ১৪বছর বয়সে করব। বিষয়টা একটু হাস্যকর। কারণ এটার মানে এই নয় যে, আমি তার সমান বা বড়। আমার মনের একটা কৌতুহল ছিল মাত্র। তারও একটি কারণ আছে, অনেকে আমাকে কটাক্ষ করতো,উপহাস করতো, আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। আমি তাঁদেরকে দেখিয়ে দিয়েছি। তাদের এ কথাগুলো আমাকে বরং অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
সত্যি বলতে কি, মানুষ আমায় ভালোবাসার নিবাসেই বরণ করে নিতে শুরু করেছে। বইটি পড়ে আমার বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক, আমাদের জেলার বেশ কজন সিনিয়র সাংবাদিক, অধ্যাপক এবং মুক্তিযোদ্ধা সহ সর্বস্থরের পাঠকরা আমাকে অভিবাদন জানিয়েছেন।
বইটি তাঁদের ভালো লেগেছে খুব। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে আমার।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, পান্ডুলিপি প্রস্তুত করে ভেবেছিলাম প্রকাশনীতে পাঠালে বইটা প্রকাশ হতে বোধহয় কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
আমার জন্মদিন ১২ ফেব্রুয়ারী। ভেবেছিলাম ১৫ তে পা দেয়ার আগে বুঝি মনোভাবগুলো প্রকাশ হবে না। তাই কবি পরিচিতিতে তখন ঐ পনেরো বছর বয়স উল্লেখ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ও প্রকাশনী পান্ডুলিপি পাঠানোর কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশ করেছে। বইটি প্রথমে অন্য একটি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ এর কথা ছিল।
বইটির নাম ‘জ্যোৎস্নাধোয়া রাত’ কেন রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জ্যোৎস্নাধোয়া রাতের সাথে আমার একটা প্রেম আছে। জ্যোৎস্নাধোয়া তারাভরা রাত দেখতে দেখতে, ঢুপিখালীর বুকে জ্যোৎস্নার আলো দেখতে দেখতে আমার কত যে বিনিদ্র রজনী কেটেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। জ্যোৎস্না রাতেই আমার কবিতার বেশিরভাগ প্রসব হয়েছে।
আর ‘জ্যোৎস্নাধোয়া রাত’ কবিতাকে কেন্দ্র করেই বইটির নামকরণ করা হয়েছে।
কবিতা নিয়ে উনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরেন্য কবি নির্মলেন্দু গুণ’র ভাষায় বলতে হয়, কবিতা আমার নেশা, পেশা এবং প্রতিশোধ গ্রহণের হিরন্ময় হাতিয়ার। এটা এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। আমি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অবধি লেখালেখি করে যাব, ইনশাল্লাহ।
কবি মোঃ রাসেল হাসান কবি নির্মলেন্দু গুণ এঁর অনুকরণে ঢুপিখালী নদীর তীরবর্তী নগুয়া কুশলগাঁও-গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাহিত্যকুঞ্জ।