বিশেষ প্রতিনিধি, সাভার ( ঢাকা)
বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু সম্প্রদায়ের আনন্দের একটি উৎসব হল রথযাত্রা। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব এটি। ভারতীয় রাজ্য ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়।
এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে। ধামরাইয়ের রথ অত্যন্ত প্রাচীন এবং উপমহাদেশে এই রথের খ্যাতি রয়েছে।
১-০৭-২০২২ শুক্রবার বিকেলে ধামরাই উপজেলার ধামরাই বাজারে রথযাত্রা শুরু হয়ে রথ টানার মধ্যো দিয়ে রথযাত্রার সমাপ্তি হয়। এবং ৯-০৭-২০২২ উল্টো রথটানার মাধ্যদিয় সমাপ্তি ঘটবে পুর উৎসবের।
রথযাত্রা অনুষ্ঠানে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডঃ শামসুল আলম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কে দোরাইস্বামী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা- ২০ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার ও এডিসি ভাস্কর দেবনাথ, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কবির মোল্লাসহ অনেকেই।
বস্তুত পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে রথযাত্রার প্রচলন। পুরীতে রয়েছে জগন্নাথ বলরাম শুভ্রদার দারুমূর্তি। কিন্তু ধর্মমতে জগন্নাথ বিশ্ব প্রতিপালক বিষ্ণুর অবতার। হলধারী বলরাম তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও সুভ্রদা তাদের ভগ্নি। রথটানা হয় এই ত্রিমূর্তিকে নিয়ে।
ধামরাই রথযাত্রার শুরুর ইতিহাস হচ্ছে, যশোপাল রাজা একদা হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতে যান ধামরাই এলাকার পাশের গ্রামে। রাস্তায় চলতে চলতে হাতি একটি মাটির ঢিবির সামনে গেলে হাতিটি থেমে যায় আর চলতে চায় না।
রাজা শত চেষ্টা করেও হাতিটিকে সামনে নিতে পারলেন না এবং অবাক হলেন। তখন তিনি হাতি থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনকে ওই মাটির ঢিবি খনন করার জন্য নির্দেশ দেন। সেখানে একটি মন্দির পাওয়া যায়। এছাড়া কতগুলো মূর্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর মূর্তির মতো শ্রীমাধব মূর্তিও ছিল। রাজা ভক্তি করে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে ধামরাই সদরে ঠাকুরবাড়ি পঞ্চাশ গ্রামের বিশিষ্ট পণ্ডিত শ্রী-রামজীবন রায়কে তিনি ওই মাধব মূর্তি নির্মাণের দায়িত্ব দেন।
তখন থেকে শ্রীমাধবের নামের সঙ্গে রাজা যশোপালের নামটি যুক্ত করায় বিগ্রহের নতুন নাম হয় শ্রীশ্রী যশোমাধব। সেদিন থেকে সেবা পূজার বন্দোবস্ত হয়। আজও ধামরাইয়ে শ্রীমাধব-অঙ্গনে পূজা-অর্চনা চলে আসছে। পরবর্তীকালে শ্রীমাধবকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ও মেলা।
সুদীর্ঘ ৩৫০ বছর ধরে এ রথযাত্রা পালিত হয়ে আসছে। কবে, কিভাবে এই বাঁশের রথটি কাঠের রথে পরিণত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।
বাংলা ১২০৪ থেকে ১৩৪৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলার সাটুরিয়া থানার বালিয়াটির জমিদাররা বংশানুক্রমে এখানে চারটি রথ তৈরি করেন। ১৩৪৪ সালে রথের ঠিকাদার ছিলেন নারায়ণগঞ্জের স্বর্গীয় সূর্য নারায়ণ সাহা। এ রথ তৈরি করতে সময় লাগে এক বছর।
রথ টানার সময় হাজার হাজার নর-নারীর উলুধ্বনি ও কলা দিয়ে ভকক্তির মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।