বিশেষ প্রতিনিধি- সাভার ( ঢাকা)
পহেলা বৈশাখে সনাতন ধর্মালম্বীদের ঐতিহাসিক চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয় ধামরাই বাজার সংলগ্ন যাত্রাবাড়ী মাঠে।
এ পূজার প্রধান আকর্ষণ পূজারীর পিঠে বড় বড় লোহার বরশি লাগিয়ে চড়কের সাথে ঝুলে শূন্যে উড়া। এই চড়ক পূজায় পুজারি ও সাধক নিতাই চন্দ্র সরকার, পিঠ জুড়ে বড়শি গেঁথে উড়েন শূন্যে। পেশায় কামার হলেও প্রতিবছর পূজার এক মাস আগে থেকে সন্ন্যাস হয়ে নিরামিষ ভক্ষণ করেন, পূজার ৫ দিন আগে থেকে ঘুরেঘুরে অন্যের বাড়িতে অন্ন গ্রহণ করেন তিনি, থাকেন গোসল ছাড়া এক কাপড়ে।
দর্শকদের জন্য আনন্দ উপভোগের বিষয় হলেও ঢাকার ধামরাইয়ের কান্দিরকুল গ্রামের বাসিন্দা নিতাইয়ের জন্য এ কাজ তার প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের সাধনা এবং প্রশান্তির। নিয়ম অনুযায়ী পয়লা বৈশাখের দিনেই চরকে বড়শি ঘোরানো হলেও ধামরাইয়ে একদিন পরে পালন করা হয় অনুষ্ঠানটি।
১৫ ইং এপ্রিল, বিকেল ০৫ টার দিকে পিঠে বরশি গেঁথে শূন্যে উড়ে ৭ পাক থেকে ২১ পাক ঘুরেছেন নিতাই। এসময় নিচে থাকা পূজারী ও ভক্তরা সমস্বরে উলুধ্বনি দেয় এবং চড়কে উরন্ত নিতাই কিছুক্ষণ পর পর সিঙ্গায় ফুঁ দিতে থাকে।
দর্শকদের মাঝে ব্যাপক উদ্দিপনা ও চড়কে ঝুলন্ত নিতাইকে ভক্তি করতে দেখা যায়। কেউ কেউ নিজের শিশু সন্তানকে চড়কে ঘুরাতে, ভক্তিভরে নিতাইয়ের কোলে সমর্পণ করেন।
চড়কে ঘোরা শেষ হলে পূজা করতে আসা ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করেন পুজারিরা।
পূজা দিতে আসা ভক্ত সূমি পাল বলেন করোনায় চরক পূজা বন্ধ থাকায় অনেক দিন পর চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হলো। মনের বাসোনা পূরন হবে এই আশায় এসেছি। অনেক দিন পর এই উৎসবে আসতে পেরে খুব আনন্দ ও ভালো লাগছে।
নিতাই সরকারের বড় ভাই প্রাণ গোপাল সরকার বলেন, করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এই পূজা। আমরা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চড়ক পূজা করে আসছি। পূজার নিয়ম কানুন সম্পর্কে তিনি বলেন প্রথম বাড়ির মন্দিরে পূজা দিয়ে বরশি গাঁথার কাজ করা হয়। পরে মাঠে বরশি ঘুরানো শেষ হলে মাঠে আবার পূজা করে এলাকায় ঘুরে ঘুরে টাকা উঠানোর আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। সব শেষে বাড়িতে যেয়ে পিঠে গাঁথা বরশি খোলা হয়। দীর্ঘ এই আনুষ্ঠানিকতার মাঝে কারো সাথে কথা বলা নিষেধ নিতাই সরকারের। তিনি আরো বলেন এই কাজ স্টার সন্তুষ্টির জন্য করা হয় তিনিই একাজে শক্তি যোগান।