লক্ষ্মীপুরের মেঘনা এখন নিস্তব্ধ। যেখানে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেখা মেলতো জেলেদের নৌকা। জালে উঠতো রূপালী ইলিশ। ভীড় থাকতো মাছ ঘাটগুলোতে। কেনা-বেচা হতো লাখ লাখ টাকার ইলিশ। মাছ ঘাটের বক্সগুলো এখন পরিস্কার। সেখানে নেই কোন কোলহল।
যেন এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে এ পেশায় জড়িত লোকদের মাঝে। গত কয়েকদিনে যেন জনশূন্য এ মেঘনা। কোন নৌকা দেখা যায়নি মেঘনায়। মাছ ঘাটগুলোতেও লাগেনি ইলিশের ছোয়া। এতে উৎপাদন বাড়ার প্রত্যাশা করছেন লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, গেল ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এই ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় মাছ ধরা যাবে না।
এ সময় মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ এসে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ডিম ছাড়ে। একটি বড় ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। বেশি ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্বিঘ্নে যাতে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে সে জন্যই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে লক্ষ্মীপুরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ মেঘনাপাড়ের জেলেদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করেছেন। পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ইলিশের প্রজনন মৌসুম সফল করতে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২২ দিন জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে লক্ষ্মীপুরের ৪৩ হাজার ৪৭২ জন নিবন্ধিত জেলের মাঝে ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করছে সরকার। এছাড়াও প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জেলেসহ সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্য কোথাও থেকে বরফ আসতে না দেওয়া, নদী সংলগ্ন খাল থেকে নৌকা বের হতে না দেওয়া, মাছঘাট সংলগ্ন বাজারের নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ রাখা, নদীর মাঝে জেগে উঠা চরের মাছঘাটগুলো বন্ধ রাখা প্রভৃতি।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ সময়ে মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইন আমান্য করলে ১ থেকে ২ বছরের জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নিষিদ্ধ সময় কেউ ইলিশ শিকারে নদীতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।