আসাদুজ্জামান খাইরুল-
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি হলে মহাসড়ক সহ আট থেকে দশটি এলাকা হাঁটু পরিমান পানিতে তলিয়ে যায়। মহাসড়কসহ এলাকাগুলো পরিনত হয় মহাসাগরে।
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এবং আশুলিয়া বাইপেল মহাসড়কে ইপিজেড সহ মহাসড়কের দুই ধারে অসংখ্য শিল্প কারখানা। যেখানে কর্মরত আছে হাজার হাজার শ্রমিক। যাদের রোদ বৃষ্টি ঝড় যা-ই থাকুক সকাল হলে যেতে হয় কর্মস্থলে জীবিকার তাগিদে। অনুপস্থিত হলে কাটা পড়ে বেতন থেকে ওইদিনের টাকা, জর্জরিত হতে হয় প্রশ্নবানে, অনেকের আবার হারাতে হয় চাকুরি।
তাইতো যাই ঘটুক না কেন হোক সেটা করোনা মহামারী অথবা কোনো দুর্যোগ জীবিকার তাগিদে উপস্থিত হতে হয় কর্মস্থলে এ সকল শ্রমিকদের। বর্ষার মৌসুম আসলে যেন এ সকল শ্রমিকদের ভোগান্তির আর শেষ নেই।
পুরো বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও আশুলিয়া বাইপেল মহাসড়ক হাঁটু পরিমান পানি জমে যায়। আর এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। প্রতিবছর মিডিয়াতে নিউজ ও প্রতিবেদন হতে থাকে। কর্তা ব্যক্তিগণ সমাধানে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের বুলি হাওড়াতে থাকেন।
এমনকি খোদ সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে সংবাদ সম্মেলনে কয়েকবার আশ্বাস দিয়েছেন এই জলাবদ্ধতা নিরসনে । সে আশ্বাস প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা এখনো কমেনি।
০১-০৬-২০২১ ইং সকালে দুটি মহাসড়কে দেখা যায় হাঁটু পরিমান পানির মধ্য দিয়ে অসংখ্য শ্রমিক, সাধারণ জনগণ সীমানাহীন ভোগান্তিকে সঙ্গ করে যার যার কর্ম স্থল ও কাজে যাচ্ছেন। সড়ক ও জনপথের এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ অঞ্চলে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেখা যায় মাঝেমধ্যে একটু আকটু কাজ করতে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানে প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. লায়ন ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পানিতে ডুবে গিয়েছে দুই মহাসড়ক ও আশপাশের মার্কেট ও দোকান গুলো। সকালে সরেজমিনে গেলে জামগড়া চৌরাস্তা, ছয়তলা, শিমুলতলা, বাইপেল মোড়, থানা মসজিদ, নতুন ও পুরাতন ইপিজেডের এলাকাগুলো দেখা যায় হাঁটু পরিমান পানিতে ডুবে আছে।
এ সময় এই এলাকাগুলোর ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের আমাদের সাধারণ জনগণের প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই। ফল ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ফলের ট্রাক থেকে নামানো এবং আরোৎ এ পানি উঠার কারনে ফলগুলো রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফল নষ্ট হয়ে আমার গুনতে হবে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি। নিঃস্ব হতে হবে আমাকে। জানিনা এভাবে আর কত বছর চলতে হবে ?
দূরপাল্লার ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল গামী বাসের হেলপার করিম উদ্দিন বলেন জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের এক ঘণ্টার পথ যেতে লেগে যায় দুই ঘন্টা, ঢাকা থেকে এসে আশুলিয়ায় প্রায় দুই তিন ঘন্টার জ্যামে আটকে থেকে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
সকালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে জলাবদ্ধতার ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তারা রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকার ও প্রশাসন কে উদ্দেশ্য করে বলেন আমাদের ভোগান্তি সব সময়ের জন্য থেকে যাবে, সরকার এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আছেন শুধু আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতির কথা বলতে।
জনমনে এখন প্রশ্ন? হাজার হাজার শ্রমিক ও অত্র এলাকায় বসবাসকারী লক্ষাধিক জনগণ কি, জলাবদ্ধতার ভোগান্তিকে সঙ্গী করে, প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস শুনে তাদের দিন পার করতে হবে? সমাধান হবে কবে ? বাইপেল মহাসড়কটি উত্তরবঙ্গের সংযোগস্থল হওয়ায় দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করে, মহা সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগে থাকে জলাবদ্ধতার কারণে।
ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ক্ষতি, চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল পৌঁছাতে সীমাহীন দুর্ভোগ এবং সাধারণ মানুষের চলাফেরা ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার, দায়ভার কার উপরে বর্তাবে ?