- মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু
সচেতন মহল আপনারা জানেন যে, আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ভোটকা ভেটকির সাম্প্রতিক কালের World Laughter Day বিশ্ব হাসি দিবস প্রত্যেক বৎসরের মে মাসের প্রথম রবিবারে পালন করা হয়ে থাকে যেন পহেলা মে দিবস তথা শ্রমিক দিবস পালন শেষে একটি শেষ নির্মল হাসি। হাসি মন্দ কিছু নয় দৃষ্টিকটু বিষয় নয় বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও মানুষকে হাসিখুশি থাকতে তাগিদ দেয়া হয়েছে তবে কারণে অকারণে অহেতুক অতিরিক্ত হাসি ভালো নয় ইহা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বটে এমনকি জীবনও চলে যেতে পারে! আনন্দ-উল্লাস বা উৎসবের সময় হাসিখুশি থাকা প্রত্যেকের উচিৎ। পক্ষান্তরে কান্নাকাটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! এটাও মনকে হাল্কা করে। লুকানো কোনও দুঃখ যন্ত্রণা লাঘব করতে সাহায্য করে। জাতিসংঘ সহ বিশ্ববাসীকে আমি World Laughter Day এর মতোই বিশ্ব কান্না দিবস অথা World Crying Day উদযাপনের পক্ষে জোর দাবী জানাচ্ছি। আমি একটি কান্না দিবস চাই।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় এবং দেখতে পাই ১৯৯৮ সালের ১০ ই মে তারিখে ভারতের মুম্বাইতে সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাপী হাস্যযোগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গবেষক ড. শ্রী মদন কাটারীয়া মহাশয় এই দিবসটি উদযাপন বা পালন করেছিলেন। উনি ছিলেন একজন সনাতনধর্মের অনুসারী।
তাহার প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানবিদ্যা দিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ফেসিয়াল ফিডব্যাক হাইপোথিসিস দ্বারা তিনি ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লাফটার যোগ বা হাস্য যোগ আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেছিলেন বলেই সেই থেকে আজ অবধি এই বিশ্ব হাসি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুনতে পেলাম ও জানতে পেলাম আমাদের এখানে ২ মে পালিত হলো বিশ্ব হাসি দিবস। প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় বিষয়টি লক্ষ করেছি বেশি। তবে এটা ঠিক হাসিখুশি মানুষকে বিধাতাও পছন্দ করেন- বলেছিলেন পণ্ডিত মহাশয় ব্রান্ট্রাড রাসেল।
মূলকথায় আসা যাক- যেমন ধরেন হাসি মানুষকে সর্বপ্রকার মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে বলে আমাদের ধারণা এবং হাসি ব্যথা লাঘব করে সে ব্যথা শারীরিক ব্যথাও হতে পারে আবার মনের ব্যথাও হতে পারে তবে আমি দেখেছি মানসিক যন্ত্রণা থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তি দিয়ে থাকে হাসি অর্থাৎ আপনাকে আমাকে মানসিক চাপমুক্ত করে থাকে। হাসলে না-কি মানুষের গোপন মানসিক চাপও কমে যায়।
এখন আরেকটি কথা না বললেই নয় সেটা হলো তাহলে আমরা কোন প্রকার হাসি দেব? যেটা করলে আমাদের জন্য ভালো। আমাদেরকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কি হাসি দিতে হবে? হাসি দিলে কোনও খাজনা বা ট্যাক্স দিতে হয় না হয়তোবা কল্পকাহিনির সেই পৌরাণিক আমলে রাজা-বাদশাদের সামনে অযাচিত হাসি দিলে শাস্তি ভোগ করতে হত বলে আমার ধারণা কেননা বর্তমানের ক্ষমতাশালী নেতাদের সামনে বা কোনও মস্তান বা গড ফাদারের সামনে কারণ ব্যতীত হাসি দিলে চরম শাস্তি বা মৃত্যুও হতে পারে।
সে যাই হোক। হাসি বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে যেমন- অট্টহাসি, মুচকি হাসি, ভেটকাইন্না হাসি, মনে মনে হাসি, বত্রিশদাঁত বের করে হাসি, তাগড়া দেখা যায় সেই হাসি বা তাগড়া হাসি অথবা ভয়ংকর হাসি ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ শেষ হয়ে যায় কিন্তু হাসির শেষ নাই!
আমার ধারণা আমি পর্যালোচনা করে দেখেছি পশুপ্রাণী জগতেও এই হাসির প্রচলন আছে কেননা পশুপাখিরাও হাসতে জানে তারাও হেসে থাকে তারাও বিনোদন করে বা বিনোদন পছন্দ করে এমনকি প্রকৃতির গাছপালাও নড়াচড়ার মাধ্যমে বিনোদন করে হাসির মতো। জলের নিচে বসবাসকারী মাছও হেসে থাকে বলে আমার ধারণা!
আমার অন্তর চোখে অনুধাবন করেছি- মরুভূমির ভিতর একটি ফুটন্ত ফুল ফুটলে সারা মরুভূমি হাসিতে উন্মাদ হয়ে যায়। ফুলের হাসি জগৎ সেরা হাসি।ঝর্ণাধারা অবারিত জলের স্রোতে হাসি বিলিয়ে থাকে। সাগর মহাসাগর প্রতিটি ঢেউয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে এটাও একপ্রকার হাসি। আকাশ বাতাসও হাসি দেয় প্রভাত কিরণের মাধ্যমে। চন্দ্র হাসি দেয় মধু পূর্ণিমায়। আর আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমিও কখনও কখনও হাসতে জানি! আমিও হাসতে ভালোবাসি!
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে আলাপকালে জেনেছি যে, হাসির সময় আমাদের মানব শরীরে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের ক্ষরণ হয় পশুপাখিদেরও হয় যাহাকে স্ট্রেস হরমোন নামে ডাকা হয় বা পরিচিত একটি কর্টিজল হরমোনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে তখন প্রাণী দেহ সতেজ ও চাঙ্গা থাকে।
অতএব হে বিশ্ববাসী আপনারা বেশি করে হাসুন। নিত্যদিন হাসুন তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকুন ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলুন হাসি দিয়ে। মনে রাখবেন হাসি দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। মাতাপিতার সাথে হাসি দিয়ে কথা বললে প্রভু খুশি হয়। এমনকি কান্না দিয়েও ঈশ্বরকে খুশি করা যায় তাঁকে জয় করা যায় World Laughter Day এবং World Crying Day মানব জাতির জন্য উপকারী ও ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দিবস। আমি প্রতি বছর শেষ অর্থাৎ বছরের শেষ দিনটিকে World Crying Day পালন করতে বিশ্ববাসীর কাছে বিনীত আহবান জানাচ্ছি।