- মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু
আনাচে কানাচে পাগলের পাগলামি চলে
মুখে মুখে বলে আজ বিশ্ব কবিতা দিবস
কি হবে এই দিবস দিয়ে- এই দিবস নিয়ে
চারিদিকে অতীব গরম আর গরম
ঝাঁঝালো রোদ্দুরে মরিচের ঝাঁজ
তারপর আবার বৈষয়িক মহামারী
ওদিকে প্রতিনিয়ত গলাবাজি চলে
আমি নহি লোকে বলে আমার কবিতা বলে!
কবিতার মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ায় অ-কবিরা
অসাধু ব্যবসায়ীরাও সেজেছে কবি মহা কবি
ওরা আসলে ধান্ধাবাজ ও চাঁদাবাজ
ভুঁইফোড় সংগঠনের নামে ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক
মনুষ্যত্ব ভূলন্ঠিত করে চলছে দিকবিদিক!
হয়েছে কি মতিভ্রম পথে প্রান্তরে কাকের ডাক শুনি
কাকেরঠ্যাং আর ঠোঁটে আছে হরেক বুলি
গায়ে কবিদের বেশভূষা ঝুড়ি রহিয়াছে ঝুলি!
বেয়াদবরা মাতৃভাষা নিয়েও তামাশা করে
ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধারাও লাঞ্চিত অপমানিত
ওরা অ কবি সমাজের কীট ওরা ঘৃণিত!
যে দিকেই তাকাই হতাশা আর হতাশা
কে দিবে আশা বুক ভরা ভালোবাসা!
সবই তো এলোমেলো আমি শুধুই শব্দ যাই গুলি
আর কেউ বলে ওহ বুঝেছি এটা বন্দুকের গুলি!
কি সব আজব ও আশ্চর্যজনক ঘটনা
একে অন্যের দোষ খুঁজে করে যায় রটনা!
চালে চালে আর চিনিতে চিনিতে সয়লাব
সাদাকালো গুলিয়ে একাত্তরের যুদ্ধকে গণ্ডগোল বলে
স্বঘোষিত নেতা বনেছে আহা কতই না কথাচ্ছলে!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আবার কটাক্ষও করে
নৌকায় চড়ে মাঝির অযথা ভুল ধরে!
আসলে ওরা দেশদ্রোহী ও নব্য রাজাকার বাহিনী
রচনা করে মুখরোচক কতশত আজগুবি কাহিনী!
শিয়াল পণ্ডিত গৃহস্থের মুরগী খেতে অভ্যস্ত
এ যে শিয়ালের হুঙ্কার নয় অসভ্য চিৎকার
ফুটপাতের কবি হকারের নানামুখী অসৎ কারবার!
সভ্যসমাজে যাত্রাপালার শিয়াল কুকুর ছাগল
আজ হয়ে গেছে উন্মাদ বড্ড পাগল!
আসলে ওরা সবাই যাত্রাপালার কবি
সূর্যকে ছেড়ে আগুনকে বলে রবি!
সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদও আজ মস্ত বড় কবি
অভিনেতা অভিনেত্রীও কবিতার ভাষায় অভিনয় করে
ছাগলামির হাজারো অনুষ্ঠান কালবৈশাখীর ঝড়ে!
ছলেবলে কৌশলে একের পর এক নানান কথা বলে
ওরা শতধা বিভক্ত হয়ে ঘুরেফিরে ঘাপটি মেরে চলে!
চোর ডাকাত যখন সাধু সন্ন্যাসী সাজে
মাতাল যখন মাতলামিকে পীরের কাণ্ড বলে
মুর্খ যখন লাগামহীন বেহায়াপনা ধরে
ঘুষখোর সুদখোরও যখন অন্যায় নহে অন্য আয় দেখে
পাষন্ড ধর্ষক যখন প্রকৃতির লীলাখেলা খেলে
পিছনের ও পাছের লোক কত কথাই না বলে!
দলাদলি আর দালালি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা
চেয়ার টেবিল দখলের রাজনীতি চলে
সাহিত্যের মেলায় পদকের বানিজ্য থাকে গলে!
ভূমিদস্যুতা বাংলাদেশকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে
আরও আছে মতলববাজ আর তেলবাজি
ক্ষমতা ও পদপদবীর জন্য ওরা মরতেও রাজি!
মানি লোকের মান নাই গুণীজনের কদর নাই
বলুন কিভাবে সমাজ ভালো থাকবে মহাশয়
নষ্ট ও ভ্রষ্টদের কারণে রাষ্ট্রের হচ্ছে ক্ষয়!
আমি আর বাঁচতে চাইনে
যাত্রাপালার কবিদের মহা উৎসব চলছে
কি যে ভয়ঙ্কর সুন্দর আবৃত্তি
মধুর চাইতেও বেশি মিষ্টি
ব্যথানাশক ওষুধ বলে আহারে বিষ
শেষ বারের মতো আমায় একটুখানি এনে দিছ!
আকার নিরাকারে চলে আবৃত্তিকার
সাহিত্যের জগতে নক্ষত্রগুলো খসেখসে পড়ে
ধুলোবালি উড়ছে যেন সুনামির ঝড়ে!
আমি বললাম নিত্য এদিকে এসো
হঠাৎ করে দেখি নৃত্য প্রদর্শনী চলছে!
নিত্য আর নৃত্যের তফাৎটাও ওরা বুঝে না
ওদের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্য আজও অচেনা!
আমি বললাম এই কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনাও
তারা আমাকে অভিনয় করে দেখালো
কি অদ্ভুত সব ব্যাপারস্যাপার
আসলে এখন চলছে কলিকাল
নামহীন কুত্তায় চাটে বাঘের গাল!
লাজলজ্জা বলতে কিছু নেই
যে লাউ সেই কদু যাকে বলে যেই সেই!
চরিত্র নেই শুধুই চাতুর্যময়ে ব্যস্ত চাটুকার
বিশ্ব কবিতা দিবসে তোদের জানাই হৃদয় হতে ধিক্কার!