সাভার প্রতিনিদি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীর ঘেঁষে গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের গ্রাম (জাবি) হামলার পর গ্রামটি ছাড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের। অন্য এলাকায় পরিচিতদের বাসায় রাত যাপন করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। গেরুয়া গ্রামের স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিয়ে বলা হয় ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে, গ্রামের মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে।’ এর কিছু সময় পরই লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে গ্রামবাসী। তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক জব্বার হল সংলগ্ন গেরুয়া বাজারে শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিস্থিতি। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘হল আমরা কীভাবে খুলব? এটা তো সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়েছিল। সরকার থেকে এ জন্য নির্দেশ আসতে হবে। সরকারি নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমরা হল খুলতে পারব না। এটা আমাদের জন্য কষ্টের।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত পড়ার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন গেরুয়ার একদল স্থানীয় লোক। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ।
পরিস্থিতি এখন পুরো শান্ত বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) ফজলুল হক। শনিবার সকালে তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত রয়েছে। আমরা গতকাল সন্ধ্যা থেকেই বিশৃ্ঙ্খলা এড়াতে এখানে সর্তক অবস্থানে আছি।’
হামলার শিকার ছাত্রদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘ওরা তো বলেছে যার যার বন্ধুবান্ধবের বাসায় চলে গেছে। আমি প্রক্টরিয়াল টিমকে বলেছি, যেখানে ওরা যাচ্ছে সেই ব্যক্তির নাম ও ফোন নাম্বার লিখে রাখতে যাতে ওরা নিখোঁজ না হয়ে যায়।’ খেলা চলার সময়ে জামসিং থেকে আসা ছেলেরা মারামারি শুরু করে। তখন আমাদের হলের ৪৪তম আবর্তনের এলেক্স, পিয়াস ও শহীদ রফিক জব্বার হলের ৪৫তম আবর্তনের জুবায়েরসহ খেলার আয়োজক যারা ছিল তারা ওই মারামারি মেটাতে যায়। তখন জামসিংয়ের ছেলেরা আমাদের ছেলেদের মারতে থাকে। তবে সেই মুহূর্তে কাউকে আমরা আটক করতে পারিনি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হলের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস বলেন, ‘গেরুয়াতে সম্প্রতি একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়। সেখানে স্থানীয় ও ক্যাম্পাসের ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল। আমি নিজেও একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমার হলের আর এক জন ছেলের দলের সঙ্গে গত সোমবার পাশের এলাকা জামসিং এর খেলা ছিল।
কায়েস আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েক দফা এই বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটমাট করার কথা বলা হয়। জামসিংয়ের স্থানীয় কাউন্সিলরও আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা মিটমাট করার কোনো চেষ্টা না করে উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল।
‘এরপরও আজ (শুক্রবার) বিকেল চারটার দিকে গেরুয়ায় বসবাসরত কয়েকজন শিক্ষার্থী আয়োজক কমিটির সদস্যদের খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আয়োজক কমিটির নজরুল নামে এক জনকে পাওয়া গেলে তার কাছে মিটমাট না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর নজরুল গেরুয়া সংলগ্ন মাদ্রাসা মসজিদ থেকে মাইকিং করতে বলে।’
কায়েস বলেন, ‘ওখানে ওরা অনেকে ছিল। শুরুতে আমাদের ছেলেদের ধাওয়া দিয়ে এলেক্স, পিয়াস ও জুবায়েরকে মারা হয়। জুবায়েরের মাথা ফেটে গেছে। এরপর ওরা কোনোভাবে গেরুয়ায় ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিলে সেখানে গ্রামবাসী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। প্রায় এক ঘণ্টা আহত অবস্থায় থাকার পর আমাদের ছেলেদের উদ্ধার করে পুলিশ।