আসাদুজ্জামান খাইরুল - বিশেষ প্রতিনিধি:
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় দেড় মাস ধরে গার্মেন্টসের বর্জ্য পানি ও ড্রেনের ময়লা পানিতে বন্দি হয়ে আছে শতাধিক বাড়ির সহস্রাধিক মানুষ । দিশেহারা হয়ে পড়ছে এ সকল মানুষ। প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে এই মহল্লা। বাড়ির মালিকদের বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে উঠতে হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর অন্বেষা গলিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ড্রেনের ময়লা ও ক্যামিক্যালযুক্ত দূষিত পানিতে ডুবে গেছে শতাধিক বাড়িঘড় সহ বিভিন্ন অলিগলি। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে এই দূষিত পানি। টয়লেটের পানি উঠছে রান্না ঘড় সহ প্রতিটি রুমে। এর কারনে দেড়মাস ধরে স্বাভাবিক কাজ ও জীবন যাপনের চরম ব্যাঘাত ঘটছে ওই এলাকায় বসবাসরত শহস্রাধিক বাসিন্দার। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। বাচ্চাসহ বয়স্কদের ভোগান্তি চরমে, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে চলা-ফেরা সবকিছুতেই যেন একটি দুর্যোগময় অবস্থায় চলছে শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতির এই এলাকার বাসিন্দাদের।
ভাড়াটিয়া ও দোকানি মনির, গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে এগিয়ে এসে বলেন, আমি এখানেই ভাড়া থাকি। একটি মুদি দোকান আছে আমার। দোকান দিয়েই আমার সংসার চলে, দোকানের ভিতরে ও পুরো এলাকা পানি বন্দি হওয়ায়, আজ দেড় মাস ধরে আমার দোকানের ভাড়া টাকারই ব্যাবস্খা করতে পারছিনা। সোংসার চলবে কি করে বুঝে উঠতে পারছি না। নোংড়া পানির জন্য দিন দিন ছোট বাচ্চা সহ সবাই অসুস্থ হয়ে পরছি। মাঝে মাঝে শুনতাম পানি সেচ দিয়ে নোংড়া পানি কমিয়ে রাখতো, এখন তাও হচ্ছেনা, আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
বাড়িওয়ালা বিউটি বেগম, স্বামী- জালাল হাওলাদার, আক্ষেপ করে বলেন ১৭ থেকে ১৮ বছর ধরে এভাবে মাঝে মাঝে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয় আমাদের। টিনশেড বাড়ি পরিবর্তন করে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যাংক লোন নিয়ে চার তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করেছি দুই বছর হলো। মাথার উপরে লোনের বোঝা। কি করে লোন শোধ করবো যদি ভাড়াটিয়াই না থাকে? আর এই পানির কারণে কোনো ভাবেই ভাড়াটিয়া থাকতে চাচ্ছেনা। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।
অপর বাড়িওয়ালা সাইফুল দেওয়ান, আফসোস করে বলেন আমাদের এখানে জনপ্রতিনিধি বলতে কেউ নেই। আমাদের দেখার কেউ নেই, বর্তমান মেম্বার রাস্তার ওপারে থাকেন আমাদের এপারের খবর তিনি রাখেন না। সাবেক মেম্বার, মালু মেম্বার মাঝেমধ্যে আমাদের খবর নিলেও এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না । তিনি গতকালকে এসে বলেছেন জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ বিষয়টির সমাধান করে দিবেন। কিন্তু এখনো এর কোন ব্যবস্থা হয়নি। আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে অসহায় হয়ে গিয়েছি। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও মাননীয় সরকার প্রধানের কাছে আমাদের অনুরোধ। দয়া করে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট এই অচলাবস্থার সমাধান করে, আমাদেরকে মুক্ত করুন ।
স্থানীয় ইয়াসিন মোল্লা (৬০) জানান সাবেক মেম্বার মালু মেম্বারের খরচে প্রাথমিকভাবে এই জলাবদ্ধতার পানির সেচের কাজ চালালেও, এলাকার কুচক্রী ও প্রভাবশালী একটি মহল শব্দ দূষণের অজুহাত দেখিয়ে বাধা প্রদান করেন। এবং দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন যারা পানি শেচ করবেন তাদেরকে। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে যোগাযোগ করা সম্ভব হইনি।
বর্তমান স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাদের মৃধার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি এবং আমি কিছুই জানিনা। আমি ওই এলাকায় একটি রাস্তা করে দিয়েছি কিছুদিন আগে। সরকারি বাজেটের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে, যার অতিরিক্ত টাকা আমার পকেট থেকে দিতে হয়েছে।
তখন শুনেছি বিভিন্ন গার্মেন্টস এর পানি নিস্কাশন হতো এলাকাবাসীর ব্যাবহৃত একই ড্রেন দিয়ে। হতে পারে ওই ড্রেনে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এই অবস্থা ফেক্টোরীর পানির কারনেই হয়েছে। পানি শেচে বাধাপ্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে এরকম শক্তিশালি ব্যাক্তি? যে পানি শেচেও বাধাপ্রদান করেন? আমার মনে হয় তাকে প্রশাসন দেকবে।