বিশেষ প্রতিনিধি
সাভারে একটি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ অপসারনের দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পত্র প্রদান এবং মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সাভারে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন তারা। একই সাথে কলেজের অধ্যক্ষ ইমরুল হাসান এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি অর্থ আত্মসাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার অসদাচরণ ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখিয়ে সাভার সরকারি কলেজের বিভাগীয় প্রধান শিক্ষকগন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর একটি অভিযোগ পত্র প্রদান করেন।
এই অভিযোগ পত্রের অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিপ্রতিমন্ত্রী সহ সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর দপফতরে প্রেরণ করেন।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার এই প্রতিষ্ঠানটির ১৩৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৪৫ জন কর্মচারী এবং ১২ টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুকৃত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। কলেজ সরকারিকরণের দ্বিতীয় ধাপের প্রক্রিয়াধীন নীতিমালার কারণে গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার থেকে শুধুমাত্র প্রেষণে একজন অধ্যক্ষ পোস্টিং দেওয়া হয়। উক্ত পোস্টে জনাব ইমরুল হাসান সাভার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কলেজের অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারী যথারীতি স্বপদে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও ইমরুল হাসান যোগদান করার পর থেকে কলেজের অর্থ লুটপাট, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, বিভিন্ন নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
বিভাগীয় প্রধান দের স্বাক্ষরিত উক্ত অভিযোগপত্রে পাঁচটি পয়েন্টে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অভিযোগ গুলো হলো-
১. তিনি অত্র কর্মস্থলে যোগদানের পরপরই কারো মতামত গ্রহণ না করে কলেজের মনোগ্রাম পরিবর্তন করেন, পরিবর্তিত মনোগ্রাম পূর্বের মনোগ্রামের চেয়ে দৃষ্টি নন্দিত নয়।
২. তিনি ইচ্ছামত কলেজ ফান্ডের টাকা ব্যয় করেন, প্রচলিত নিয়মে অন্যান্য শিক্ষকদের পাওনা না দিয়ে এককভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেন, তাদের ন্যায্য পাওনা দাবি করলে শিক্ষকদের বেতন বন্ধের হুমকি প্রদান সহ, তিনি কলেজের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন, এমনকি সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদমর্যাদার সাথে তুলনা করে তার পদবী উপরে বলে মন্তব্য করেন। যাহা একজন সরকারি কর্মকর্তা কে অপমান করার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
৪. তিনি তার নিজ জেলার কর্মচারীদের নানারকম প্রাধান্য দিয়ে থাকেন যাতে কলেজের আর্থিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তার এলাকার একজন ছেলেকে পিয়নের দায়িত্বে রেখে, তার স্ত্রীকে দিয়ে কলেজের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে ক্যান্টিনের কোন ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করেন না। এসব বিষয়ে কথা বললে তিনি শিক্ষকদের সাথে সর্বদা অসাদাচরণ করেন।
৫. ইতিমধ্যে তিনি কলেজের উপাধ্যক্ষকে বিভিন্ন ইস্যুতে মানসিক চাপ প্রদান করে গালাগালি ও অশোভন আচরণ করেন। এ ধরনের ব্যবহারের জন্য কলেজের কাউন্সিলর সহ সকল শিক্ষক তীব্র প্রতিবাদ করলে প্রাথমিকভাবে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও পরবর্তীতে তিনি তা আবার পুনরাবৃত্তি করছেন।
এছাড়াও অভিযোগপত্রে অভিযোগকারী কলেজের বিভাগীয় প্রধানগণ বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায় ইমরুল হাসান তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। তাই তাকে অপসারন করে একজন সৎ যোগ্য অধ্যক্ষ প্রেরণ করে কলেজটির ঐতিহ্য এবং সুন্দর পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার আবেদন করেন তারা।
এব্যাপারে অধ্যক্ষ ইমরুল হাসান বলেন, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীই। শুধু সাভার বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় সাভার সরকারী কলেজ নামে পুনঃ নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে সকল আনিত অভিযোগ অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন।