ভোলা প্রতিনিধি:
মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ১০ বছর ঢাকার একটি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানীতে কাজ করেন আমেনা বেগম। হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে রোজগারের ৫ লাখ টাকা জমিয়েছেন ভবিষ্যতের সুখের আশায়। নিজের রোজগাড়ের সব টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে প্রবাসে পাঠিয়েছেন স্বামী কবির হোসেনকে। সব কেড়ে নিয়ে প্রবাসে থেকে ভুয়া তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়ার অপচেষ্টা করছেন প্রতারক স্বামী কবির হোসেন। অসহায় গৃহবধূ আমেনা বেগম তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর সংসার থেকে বিতারিত হওয়ার আশংকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।এখন নিজের ভুবনে নিজেই পরবাসী এই গৃহবধু।স্বামীর ভিটে ছেড়ে যেতে শ্বশুর শ্বাশুরি দেবরের হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন তিনি। এখন অব্যহত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন । স্থানীয় থানা পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়নি। গ্রহন করেনি সাধারন ডাইরিও । ফলে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে বুকফাটা আর্তনাদ করছে তিন সন্তানের জননী আমেনা। আমেনার আর্তনাদে পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
ঢাকার ধানন্ডির একটি ইলেকট্রনিক কম্পানির কর্মী ছিলেন আমেনা বেগাম। নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার তাহেরপুর গ্রামের মৃতঃ আলী আহমেদের মেয়ে আমেনা বেগম।সেখানে ২০০৯ সনে পরিচয় হয় হোটেল কর্মচারী কবির হোসেনের সাথে। প্রেম প্রণয়ের পথধরে ২০১২ সনে পারিবারিক ভাবেই প্রেমিক হোটেল কর্মচারী কবির হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। কবির হোসেন চরফ্যাসন উপজেলার দুলারহাট থানার আহাম্মদপুর ইউনিয়নের মোতাহার হোসেনের ছেলে। সুখের আশায় নিজের হাড়ভাঙা রোজগারে জমানো ৫লাখ টাকা দিয়ে স্বামী কবির হোসেনকে দক্ষিণ কোরিয়া পাঠান স্ত্রী আমেনা বেগম। তারপর থেকে বেশ ভালাই চলছিলো তাদের সংসার। বর্তমানে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান আছেন তাদের। প্রবাসে থেকেই চরফ্যাসনের এক যুবতীর সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পারেন স্বামী কবির । ২০১৯ সনে দেশে ফিরে ওই যুবতীকে গোপনে বিয়ে করেন তিনি। তারপর থেকেই কবির হোসেন আর আমেনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিন সন্তানসহ আমেনার খোজ খবরও নিচ্ছেন না। কবিরের বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যরাও আমেনাকে ঘরছাড়া করতে নানান ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রবাসে ফিরে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীর মাধ্যমে আমেনাকে তালাক নামা পাঠান কবির হোসেন। যদিও সন্দেহজনক ওই তালাকনামা গ্রহন করেনি আমেনা। কিন্ত তালাকনামা পাঠানোর পর ১৩ আগষ্ট আমেনাকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার জন্য শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। শ্বশুড় শাশুড়ি দেবনসহ পরিবারের লোকজন নিত্য মারধর করে ঘরের মালামাল গুলো ট্রাকভর্তি করে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে এবং থানা পুলিশের সহায়তায় এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার পর দুলারহাট থানার তৎকালিন অফিসার ইন চার্জ ইকবাল হোসেন আমেনাসহ তার সন্তানদের ভরপোষের জন্য প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য শ্বশুড় মোতাহার হোসেনকে নির্দেশ দেন। মোতাহার হোসেন দীর্ঘদিন এই নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা দিয়ে আসছিলেন। কিন্ত সম্প্রতি ওসি ইকবাল হোসেন বদলী হয়ে যাওয়ার পর মোতাহার হোসেন টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। খেঁাজ নিচ্ছেন না প্রবাসে থাকা স্বামী কবির হোসেনও। এ সংকটের মধ্যে একদল বখাটে মহিলাকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকী দিচ্ছে।অন্যথায় সম্ভ্রমহানীসহ নানান ক্ষতির হুমকী দিচ্ছে। নিরুপায় আমেনা বেগম আবারও দুলারহাট থানার ওসি মোরাদ হোসেনের শরনাপন্ন হন। কিন্ত ওসি আমেনা বেগমকে সমঝোতা করে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেন এবং তার কোন জিডি কিংবা মামলা নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ওসির এমন বক্তব্যের পর নোয়াখালীর মেয়ে আমেনা বেগম তিনটি সন্তান নিয়ে চরফ্যাসনের স্বামীর বাড়িতে চরম অসহায় ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত কবির হোসেন প্রবাসে থাকায় তার বক্তব্য জানাযায়নি।তবে কবিরের বাবা মোতাহার বলেন, এখন তার ছেলের সাথে আমেনার কোন সম্পর্ক নাই। ছেলে কবির হোসেন তার স্ত্রী আমেনা বেগমকে তালাক দিয়েছে ।
দুলারহাট থানার ওসি মোরাদ হেসেন জানান, ওই নারীকে সমেঝোতার জন্য কোন চাপ দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তবে শ্বশুর পরিবার হুমকি দেয়ার বিষয়টিও আমার জানা নাই। যদি তার দাম্পত্য কলহ থাকে সে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। তাকে হুমকি দেয়া হলে সেটা একটা জিডি হিসেবে থানা গ্রহন করবে।