- মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু
ডাক পিয়নের ভুল- তবুও দুইযুগ পরেও চিঠি পেলেম নির্ভুল।
প্রকৃতি ঘেরা জনমানবশূন্য নিস্তব্ধ পরিবেশ। চারিদিকে মিষ্টি বাতাস। প্রতিদিনের ন্যায় ঘুম থেকে উঠলাম। মনে হচ্ছে কিছু একটা সুসংবাদ আমার দিকে ঝড়ের বেগে তেড়ে আসছে। পরক্ষণেই আমার অনুমান সত্য হলো। ভালোবাসার ইতিহাস রচিত হলো।
রবিবারে রবির কিরণে মনোজগতে নাটকীয় উষ্ণতা অনুভব করলাম, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় জোনাকিপোকাও মিটিমিটি আলো জ্বালিয়ে ছিল। সোডিয়াম লাইটের মিডিয়াম আলো- দিনটি ছিল অনেক ভালো। জয়জয়কার সুবর্ণজয়ন্তী। সুখবর শুধুই যে সুখবর। সোমবার যায় মঙ্গলবার যায় বুধবারে ঘুম নাহি আয়! রাত জেগে গভীর রজনী শেষে একটি কাব্য সমেত প্রেমপত্র হাসি দিয়ে আমার হস্তে এসে পড়ে। আমি সেই প্রেমপত্রখানা প্রেমপাত্রে রেখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। এ যে আমার প্রেম রাজ্যের সংবিধান।
মহানন্দে একটি ইলহাম ঢংকা বাজিয়ে লঙ্কা কান্ড ঘটায়। অবশেষে মরুভূমির বুকে তুর পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম ওহীটি হাজার লক্ষ মাইলের পথ পেড়িয়ে নাযিল হলো। আজ সবুজে সবুজে ঢেকে গেছে শূন্যতা। নদীতে জোয়ার এসেছে। অন্ধকার দূর হয়ে গেছে একটি চিঠির আলোয়। সে যে একখণ্ডের সহীফা। বৃহস্পতি গ্রহের প্রভাব শুক্রবার প্রভাতে পড়ে। নব রূপে আমাকে গড়ে।
হঠাৎ একটি বালক দৌড়ে এসে আমায় বলে - ওই যে দেখতে পাচ্ছেন- একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে- উনি হলেন ডাক পিয়ন। সে আপনাকে খুঁজছেন। আপনার জন্যে নাকি একটি চিঠি এসেছে ভিনগ্রহ থেকে। ছেলেটি বললো আমি আপনাকে দেব বলে ডাক পিয়নের কাছে চেয়ে ছিলাম চিঠিটি কিন্তু সে আমাকে দেয়নি। এটা নাকি আপনার হাতেই দিতে হবে, রেজিস্ট্রারকৃত চিঠি তাই আপনাকে খুঁজছে। আমি তখন ঘুম থেকে উঠে ওহীর জন্যে অপেক্ষমাণ।
একটা দৌড় দিলাম। আগুন্তকঃ আমায় দেখে থলির ভিতর হাত দিয়ে একটি চিঠি বের করলেন এবং আমায় বললেন আপনি কি সেই ব্যক্তি যিনি কবিতা লেখেন, আপনার নাম বাবু? আমি বললাম হ্যাঁ, আমিই সেই বাবু। হাসি দিয়ে আমার হাতে চিঠিখানা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন। খামের উপর চোখ বুলাতেই দেখলাম আমার সেই হৃদয়ের রাণী চিঠি দিয়েছেন। তাই তো আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গাইতে লাগলাম, হে আমার স্বর্ণালি স্মৃতি- অতঃপর ফিরে এসেছে চিঠি।
একি সেই ডাক পিয়নের ভুল- যাই হোক তবুও দুইযুগ পরেও চিঠি পেলেম নির্ভুল।
মোড়ক উন্মোচিত করে একখণ্ডের সহীফাটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করি। প্রথমেই প্রেমের দেবী আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করে বলছেন- প্রিয়, এই কথাটি শোনার পড় আমার কর্ণকুহরে সুরের মূর্ছনায় প্রেমের গীতাঞ্জলি ও গীতবিতানের রাজ্যে হারিয়ে যেতে লাগলাম। মনে মনে আমিও তাকে বলতে লাগলাম ওহে প্রিয়া থামলে কেন? বলে যাও শুনি! তোমার নুপুর ও পায়েলের ঝংকার তুলে জগৎবাসীর ঘুম ভাঙিয়ে দাও। বল তারপর বল, কি বলতে চাও! আমি আকুল ও ব্যাকুল হয়ে তার মুখপানের দিকে তাকিয়ে রই। পৃথিবীতে "প্রিয়" শব্দের যত আছে অভিধান, যত আছে শব্দ ভান্ডারের প্রতিশব্দ- আমি সেই সকল অর্থ দিয়ে তোমার দেয়া "প্রিয়" শব্দটাকে কালজয়ী করে দিলাম।
রুবা আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে, অনেক ভালো লাগছে কিন্তু আমার কাছে ওকে এমনিতেই অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে। লক্ষ মাইল দূরে বসে আমি আর সে অতীব নিকটে চলে আসি। আমার সামনে তুমি- তোমার সামনে আমি। এর মাঝেই আমরা দুইজন জান্নাতি সুবাসিত নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সুগভীর ভালোবাসা দিয়ে ঢেকে দিলাম।
ওর মায়াবী মুখখানি আমাকে পাগল করে দেয়। ওর লাজুক আঁখির দিকে তাকালে আমার অজান্তেই বিন্দু বিন্দু করে জমানো কষ্টগুলো ঝর্ণাধারার মতো অশ্রুপাত ঘটায়। চোখ কাঁদে আমার হৃদয় কাঁদে আমি কিন্তু কাঁদি না। এ এক ইন্দ্রিয়বিলাসী ভালোবাসা। এ এক অন্যরকম ভালোবাসা। অন্যরকম অনুভূতি দিয়েছে মধুর স্মৃতি।
মান অভিমানে সে যখন কাঁদে তখন জগতে প্রবল স্রোত বহে, প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যায়। প্রবল বেগে বৃষ্টি নামে। সেই কান্না আমাকেও কাঁদায়। প্রকৃতিও আমাদের সাথে কেঁদে কেঁদে কথা বলে। জীবনের যত কান্না হাসি গান সব তোমার জন্যে- সব আমার জন্যে।
আমি তাকে বললাম রুবা, সে উত্তর দিলো কি, কি হয়েছে তোমার? আমি রুবার প্রশ্নের জবাবে বললাম কিছু হয়নি। কি বলতে চাও? বলো। আমি বললাম নতুন করে কি বলবো তোমায়? শুধুই এতটুকু বলবো- আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে চাই। রুবা আমার কথা শুনে কম্পমান কণ্ঠে বলে- কবি আমিও তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি, আই লাভ ইউ, এই বলেই লজ্জায় মাথাটা নিচের দিকে নামিয়ে নিলেন। আমিও সেই ভালোবাসা পেয়ে উড়ন্ত পাখির ডানায় ভর করে স্বপ্নীল রাজ্যে হারিয়ে যেতে থাকি।
বিদ্রঃ অসমাপ্ত প্রেমের গল্প- প্রথম খন্ড