প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১:৫৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০, ৪:১৬ অপরাহ্ণ
বরিশাল থেকে-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধরে দীর্ঘ এক যুগ ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এখন পরিবারসহ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। যিনি বিদেশে থাকাকালীন সময়েও বরিশাল জেলার একটি হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কুচক্রী মহলের একের পর এক হামলা-মামলা এবং হয়রানিতে বিপর্যস্ত যার জীবন, তিনি হলেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্তান এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাকিল ইসলাম রাব্বি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে ও সহযোগিতা চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি, সংবাদ সম্মেলনে
নিজে হত্যা ও গুমের শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে এই তরুণ ছাত্রলীগ নেতা তার বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের সঠিক তদন্ত চেয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-সদস্যদের অব্যাহত হেনস্তা থেকে বাঁচতে গত ২ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন।
তবে তাতেও কোনো সুফল না পেয়ে শেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির আশায় ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি তার মানবেতর জীবনযাপন ও আসহায়ত্বের কথা সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান। ছাত্রলীগ নেতা সাকিল ইসলাম রাব্বি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের বাহেরঘাট গ্রামের হাজী মোহাম্মদ সেলিম রেজার ছেলে। তবে তার বাবা রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হওয়ায় তার বেড়ে ওঠা রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায়। সেখানকার নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
রাজধানীর বৃহত্তর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সর্বশেষ গঠিত কার্যকরী কমিটিতে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তরুণ এ ছাত্রনেতা। অদ্যাবধি তিনি সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ওই পদের দায়িত্ব পালন করলেও গত দুই বছরে তার জীবনে ঘটে গেছে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। যেসব ঘটনায় তিনি ও তার পরিবার তিক্ত-বিরক্ত হয়ে সর্বদা আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাকিল ইসলাম রাব্বি তার সাথে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজ এলাকার কারফা বাজারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জল্লা ইউপির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু। সে সময় আমি ছিলাম দেশের বাইরে।
কিছুদিন পরে দেশে ফিরে জানতে পারি উজিরপুরের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার ঘটনায় আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলে ওই হত্যামামলায় আসামি করেন। হত্যা মামালায় জামিনে বের হয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনি মাঠে প্রচারণায় অংশগ্রহণের একপর্যায়ে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আমার কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে । খবর পেয়ে আমি আহত কর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে মামলা করতে মোহাম্মদপুর থানায় রওনা করি ।
পথিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামিউল আলিমের সমর্থকরা আমি ও আমার কর্মীদের আটক করে একটি বাড়িতে নিয়ে মারধর করে ফেলে রাখে।
একপর্যায়ে র্যাব-পুলিশ অচেতন অবস্থায় আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমি ও আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অস্ত্র মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়।
অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতা রাব্বির ওপর সামিউল আলিম ও তার সমর্থকদের হামলার ঘটনায় পরিবারের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত কারণে পুলিশ আজও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
নিজ দলীয় সিনিয়র নেতাদের নোংরা রাজনীতির শিকার হওয়া এই তরুণ ছাত্রলীগ নেতা জানান, নৌকার সমর্থিত প্রাথীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে দীর্ঘ পাঁচ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি রাজধানীতে তার আদাবরের বাসায় অবস্থান করেন। এরই মধ্যে রাব্বি তার একাধিক কর্মীর মাধ্যমে জানতে পারেন,
সেই কাউন্সিলর প্রার্থী সামিউল আলিম স্থানীয় সূচনা কমিউনিটি সেন্টারসহ, টিক্কাপাড়া ও জহুরি মহল্লায় তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাকে অপহরণ কিংবা বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করতে চায়। পরবর্তীতে পরিবারের পরামর্শে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি জীবনযাপন করে ত্যাগী এই ছাত্রলীগ নেতা নিজ জীবনের নিরাপত্তা এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলার সঠিক তদন্ত চেয়ে গত ২ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, র্যাব প্রধান ও তেজগাঁও জোনের ডিসির কাছে লিখিত আবেদন করেন।
তিনি আরও বলেন নান্টু হত্যার ঘটনায় নিজ উপজেলার আ.লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ায় দীর্ঘ দুই বছর পর গত কুরবানির ঈদ উপলক্ষে ফের নিজ গ্রাম উজিরপুরের জল্লায় যান তিনি। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। ঘরের মধ্যে একমাত্র পুরুষ সদস্য রাব্বি।
এ ছাড়া বাসায় তার অসুস্থ মা, ৯০ বছরের বৃদ্ধা নানি, পাঁচ শিশুসহ কয়েকজন নারী আত্মীয় ও দুই গৃহকর্মীও ছিলো। হঠাৎ রাত আড়াইটার দিকে ঘরের দরজায় লাথি এবং জানালায় আঘাতের বিকট শব্দ শুরু হয়। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকা নারী-শিশুসহ আশপাশের প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে রাব্বির পরিবারের সদস্যরা ফোন করে প্রতিবেশীদের কাছে এবং তিনি নিজে ৯৯৯ নম্বরে সাহায্য চান। তখন এলাকাবাসী ডাকাত পড়েছে ভেবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় এবং গ্রামের হাজারো মানুষ তাদের বাড়িতে ছুটে আসে। এ সময় বাইরে থেকে একজন জানান, তারা আইনের লোক। বাসায় অবৈধ কিছু রয়েছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি অভিযান চালান, কিন্তু দুই ঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে কোন কিছু না পেয়ে, তারা রাব্বির মুখ থেকে কোন অত্যাচার করা হয় নি বলে
মৌখিক জবানবন্দি নিয়েছেন ।
মোহাম্মদ থানা ছাত্র লীগের এই নেতা এখন তার জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানান।