আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনায়
করোনায়

করোনায় বাড়ছে সংক্রামন, টেস্টের জন্য হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা

নিউজ ডেস্কঃ

প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংক্রামনের সংখ্যা বাড়ছে নতুন শনাক্ত রোগী সাথে বেড়েই চলছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আজও করোনায় দেশে ১ হাজার ৫৩২ জন শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২৮ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা সংক্রমণ কমাতে বেশি বেশি টেস্টের প্রয়োজন। এ কারণে দেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

আর এই করোনা পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫০০ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

ভোগক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগ তুলেছেন একজন চিকিৎসকই। এই অভিযোগ তুলেছেন দেশের ২টি বেসরকারি হাসপাতালের। একটি ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল এবং অন্যটি হচ্ছে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

ডা. সাদিয়া আফরিন নামে ওই চিকিৎসক করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রথমে ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে যান। সেখানে সেম্পল ও ডেংগু টেস্টের নামে তার কাছ থেকে ৪৫০০ টাকা চাওয়া হয়। পরে তিনি পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে যান, সেখানেও চিকিৎসকের ফি’র নাম করে ৪৫০০ টাকা চাওয়া হয়।

তিনি নিজে চিকিৎসক পরিচয় দেয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। পরে করোনা টেস্ট না করেই বাসায় ফিরে যান ডা. সাদিয়া আফরিন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে একটি আবেগী পোস্ট করেন তিনি।

তিনি আরও লিখেন, ‘দ্বিতীয় দফায় সরকারিতে (হাসপাতাল) সিরিয়াল জোগাড় করতে পারিনি। বাবা-মার দুশ্চিন্তা সহ্য করতে না পেরে ৪০০০ টাকা হাতে ছোট ভাইকে পাঠিয়েছি বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

ভাই ফোন করে জানালো সিরিয়াল মানার কোনো বালাই নাই। তাড়াতাড়ি যেতে, ৫টার মধ্যে গেলে টেস্ট হবে, না হলে হবে না।’

বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাতে ক্যানোলা, বড় এপ্রোন, মাস্ক, গ্লভস পরে হাঁপিয়ে যাওয়া আমি হাসব্যান্ডসহ রিক্সা থেকে নামতে ভাই স্লিপ হাতে ধরিয়ে বললো ৫০০ টাকা কম পড়েছে।

আমি জানি টেস্ট ৩৫০০ করে (সরকারি আদেশ ও মানি রিসিপ্ট সংযুক্ত)। ৪ হাজার টাকায় ৫০০ টাকা উদ্বৃত্ত না থেকে উল্টা আরও ৫০০ টাকা কেন দিতে হবে আমার বোধগম্য হলো না।

স্লিপ হাতে দেখি নামের বানান ভুল “সাদিয়া আফরোজ” ডেংগু টেস্ট ৫০০ আর সার্ভিস চার্জ ৫০০ ধরে বিল হয়েছে ৪৫০০।

উল্লেখ্য, আমার ভাই স্লিপ করার আগে কোভিড টেস্ট এর দাম জিজ্ঞেস করে শুনে নিয়েছে ৩৫০০ টাকা, আর স্লিপ হাতে নিয়ে দেখে টাকা ৪৫০০ লেখা। আমি দোতলায় উঠে রিসেপশনে স্লিপ দেখিয়ে বললাম নামের বানান ঠিক করেন আর আমি শুধু কভিড-১৯ টেস্ট করাবো টাকা ফেরত দেন।

এই কথা বলাতে তারা উত্তর করলো এই টেস্ট ৪৫০০ করেই। আমি বললাম, সরকারি নোটিশ করা দাম ৩৫০০, বেশি দিয়ে কেন করাবো! শুনে মহাশয় অন্য দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো। মিনিট দুয়েক দাঁড় করিয়ে রেখে জানালো “এটা সরকারি হাসপাতাল না। এখানে এইটাই দাম।” আমি বললাম, আমাকে আপনি সরকারি হাসপাতাল শিখাবেন! দাম সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঠিক করে দেওয়া, আর আমি ডেংগু টেস্ট না করাতে চাইলে প্যাকেজ বলে চালিয়ে জোর করে করাবেন আপনি?!

সে বলে তাদের ওখানে এই সিস্টেমই, শুধু কোভিড টেস্ট নিয়ম নাই। এরপর আমাকে ঝাড়ি মেরে বলে স্লিপ কাটার সময় আমি কোথায় ছিলাম? স্লিপ একবার কাটা হয়ে গেলে আর কিছু করার নাই। টাকা ফেরত হবে না।’

পরে তাকে টাকা ফেরত দেওয়া হয় জানিয়ে ডা. সাদিয়া বলেন, ‘আমার হাসব্যান্ড এপ্রোন পরা আমাকে দেখিয়ে বললো, “আমরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ দুইজনই ডাক্তার, আমরা জানি এই টেস্ট এর দাম কোথায়, কতো। আমি এই দামে এই টেস্ট করাবো না, আপনি টাকা ফেরত দেন।” টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না জানিয়ে তারা ম্যানেজমেন্টে কথা বলতে বলে।’

হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে ডা. সাদিয়া বলেন, ‘ভেতর থেকে ম্যানেজমেন্টের লোক বের হয়ে আসলে তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘রক্ত না নিয়ে শুধু সোয়াব দিয়ে কিসের ডেংগু টেস্ট করেন আপনারা! তারা জানালো আমাদের ইনফরমেশন গ্যাপ হয়েছে, রক্তও নেওয়া হবে। আর অন্য কেউ বুঝে ওঠার আগেই সমোঝোতা স্বরূপ তড়িঘড়ি টাকা ফেরত দিয়ে বাকিদের রোষানল থেকে মাফ পেতে চায় আর টেস্ট না করেই ফিরে আসতে হয় আমাকে। এভাবে আগে পরে কতজনকে তারা ঠকিয়েছে আমার আর জানা হয় নাই।’

স্কয়ার হাসপাতালের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম এবার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে। ভেতরে গিয়েয়ে নোটিশ দেখলাম সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার এর মধ্যে টেস্ট করানো হয়। রিসেপশনিস্টের কাছে দাম জেনে বুঝতে পারলাম একই সিন্ডিকেট, ৪৫০০ টাকা। কারণ জানতে চাইলে আঙ্গুল দিয়ে একজন ডাক্তারকে দেখালো তার ফি ১ হাজার টাকা।

আমি বললাম, আমি নিজেই ডাক্তার। আমার শুধু টেস্ট করালে হবে। আগে ডাক্তার দেখাবো না। রিপোর্ট পেয়ে প্রয়োজনে পরে দেখাবো। তারা বললো এই নিয়ম নাই। টেস্ট করতে চাইলে ডাক্তার না দেখালে টেস্ট হবে না, ফ্লু কর্ণারের ডাক্তার না দেখাতে চাইলে, চেম্বারে কনসালটেন্ট হলেও দেখাতে হবে। মানে ১ হাজার টাকা তারা নিয়েই ছাড়বে, তা যে সূত্রেই হোক না কেন।’

দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ৩৫০০ টাকা নিয়ে গিয়েও অনিয়ম মেনে নিতে না পেরে টেস্ট না করেই আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে। আজ রোববার আমি একটি সরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনেয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মো.আদিল বলেন, ‘সরকারি ফির বাইরে তো আর কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। তবে অন্য কিছুর জন্য বাড়তি টাকা লাগতে পারে। বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই।’

এরপর আনেয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের ম্যানেজার মো. নেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশের ৩৫০০ টাকা ছাড়া করোনা পরীক্ষায় আর কোনো টাকা নেওয়া হয় না। সরকারি আদেশ মানা হচ্ছে।’

করোনা পরীক্ষার নামে ৪৫০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়। আর হয়ে থাকলে সেটা আমার জানা নেই।’

সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার মো.জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারি ফির বাইরে একটা টাকাও নেওয়া হচ্ছে না।’

পরে ওই চিকিৎসকের ঘটনার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে আসলে কত টাকা লাগে এটা হটলাইন নাম্বারে ফোন করে জেনে নিতে।’

এরপর স্কয়ার হাসপাতালের হটলাইন নাম্বারে ফোন করে কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা মো. লেলিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে প্রথমে বলেন, ‘কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য ৩৫০০ টাকা নেওয়া হয়।’

বাড়তি কোনো টাকা বা ফি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে চিকিৎসকের ফি যোগ হবে ১০০০ টাকা। অর্থাৎ মোট ৪৫০০ টাকা লাগবে।’

যদি কেউ ডাক্তার না দেখায় বা অন্য কোনো ডাক্তার যদি কাউকে পরীক্ষা করতে পাঠায় তাহলেও কি ১০০০ টাকা ফি দিতে হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. লেনিন বলেন, ‘এখাকার নিময়ই এটা। আমাদের নিজস্ব একজন চিকিৎসককে আগে দেখাতে হবে। এরপরই পরীক্ষা হবে। না হলে হবে না।’

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap